ঢাকা,  সোমবার  ০৬ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

উত্তপ্ত মধুখালী: বহিরাগতদের আনাগোনা, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছে কারা?

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উত্তপ্ত মধুখালী: বহিরাগতদের আনাগোনা, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছে কারা?

সংগৃহীত ছবি

  • মুধখালিতে তাৎক্ষণিক ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
  • বাকিদেরও গ্রেফতারের অভিযান চলছে
  • প্রশাসনের তড়িৎ পদক্ষেপে স্থিমিত হয় পরিস্থিতি
  • ৬ দিন পর হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠে মধুখালী
  • নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চলকর তথ্য

১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফরিদপুরের মধুখালীতে সন্দেহের বশে ক্ষুব্ধ জনতা গণপিটুনি দেয় একটি বিদ্যালয়ে কাজ করা নির্মাণ শ্রমিকদের। এতে দুই ভাই নিহত, গুরুতর আহত হন আরও ৫ শ্রমিক। এই ঘটনায় উত্তপ্ত মধুখালী। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ফরিদপুরে। টানটান উত্তেজনা সর্বত্র।

হত্যার প্রায় ৬ দিন পর এর প্রতিবাদে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ফলে এদিন সকাল ১০টা থেকে এ এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। বিক্ষোভকারীরা ইট ছুড়েছে, আগুন ধরিয়ে গাছের গুড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। কিন্তু কেন? উদ্দেশ্যই বা কি? কি চান তারা? জানেন না কেউ!

হত্যায় জড়িতদের মধ্যে তাৎক্ষণিক ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাকিদেরও গ্রেফতারের অভিযান চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপে স্থিমিত হয়ে যায় হত্যার ঘটনা। এমন শান্ত পরিস্থিতির ৬ দিন পর হঠাৎ বিচারের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে মধুখালী। এর নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চলকর তথ্য।

জানা গেছে, 'ইসলাম প্রেমি'র ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণকে উস্কে দিয়েছে সরকার বিরোধী একটি মহল। এই কর্মসূচিতে তারা হাজার হাজার বহিরাগতদের সমবেত করেন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একত্রিত হয়ে বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক রুপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

উত্তপ্ত মধুখালীকে আরো উত্তপ্ত করে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রচার চালিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মনোযোগ আকর্ষণের পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে মনে করছেন সমালোচকরা। কেন না সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউসহ বিশ্ব সমাজ এখন যথেষ্ট তৎপর। তারা ইস্যুটিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।

সূত্রমতে, মধুখালীর এই সহিংসতার ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকে বিএনপি, জামায়াত, চরমোনাই, হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ঢাকা থেকে গিয়ে মধুখালী ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। ২৩ তারিখ সকালে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা চালায়, অবরোধ করে। 

এমনকি চিহ্নিত কয়েকটি হিন্দু দোকান ও বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাধ্য হয়ে ফাঁকা গুলি ও ছররা গুলি ছুড়লে কয়েকজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আহত হয়।

উল্লেখ্য, ২৩ এপ্রিলের অনাকাঙ্খিত সহিংসতার ঘটনাটি এমন সময় ঘটলো যখন দুই ভাই হত্যার ঘটনায় বিএনপি কর্তৃক তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি মধুখালীতে গমন করে। 

সূত্রমতে, হঠাৎ এই বিক্ষোভের আগের দিন বিএনপির তদন্ত কমিটি একটি হোটেলে স্থানীয় বিভিন্ন সরকার বিরোধী ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, উক্ত বৈঠক থেকে বের হয়ে ১০/১২টি মোটরসাইকেল যোগে পাঞ্জাবি, পাগড়ি পরিহিত ও রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকা প্রায় ১৮/২০ জন লোক বিভিন্ন দিকে দ্রুত চলে যান। আর পাগড়ি পরিহিত এই ১৮/২০ জন লোককেই ২৩ তারিখের বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই ভাই হত্যার ঘটনায় দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে মধুখালী পরিস্থিতি শান্ত হলে জনমনে স্বস্তি নেমে আসে। ৬ দিন পর হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্তের পেছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র নিহিত রয়েছে, যা তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত চিহ্নিত করা জরুরী। নইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।