ঢাকা,  রোববার  ১৯ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

প্রত্নসম্পদের ক্ষতি করলে ১০ বছর কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৬ মে ২০২৪

প্রত্নসম্পদের ক্ষতি করলে ১০ বছর কারাদণ্ড

ফাইল ছবি

অনুমতি ছাড়া দেশের কোনো প্রত্নসম্পদ বিদেশে পাঠানো যাবে না। পুরাকীর্তির ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের বিধান করা হচ্ছে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে পুরাকীর্তির অনুকৃতির ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হবে। রাষ্ট্রীয় প্রত্নসম্পদের পাচার রোধে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রত্নসম্পদ প্রদর্শনী ও গবেষণার স্বার্থে পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো যাবে না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এসব বিধান অমান্য করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে।

এসব বিধান রেখে করা হচ্ছে প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ আইন-২০২৪। আইনটির খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ সোমবার উপস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে সংশোধন করা হচ্ছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি আইন। এটির খসড়াও মন্ত্রিসভায় উঠছে আজ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ আইনের খসড়ায় প্রত্নসম্পদকে ‘অমূল্য’ আখ্যা দিয়ে এর ক্ষতিসাধন, ধ্বংস, ভাঙা, বিনষ্ট, পরিবর্তন করলে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে যুগোপযোগী আইন না থাকায় নানা প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিঘ্ন ঘটছে। এরই মধ্যে দখল ও বেহাত হয়েছে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও নিদর্শন। ঐতিহাসিক অনেক অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে নতুন রূপ। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত আইনের ফাঁক গলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক অমূল্য প্রত্নসম্পদ। অমূল্য প্রত্নসম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংরক্ষণে পুরোনো আইন রহিত করে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

পরবর্তী সময়ে নানা প্রক্রিয়া শেষে আইনটির খসড়া করা হয়। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে আবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। 

প্রত্নসম্পদ রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অধিযাচন (ফরমায়েশপত্র) সাপেক্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। এতে পুরাকীর্তির ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের বিধান রাখা হয়েছে। 

এ ছাড়া নতুন আইনে স্থাবর প্রত্নসম্পদের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকা বা প্রপার্টি জোন ও বিশেষ সুরক্ষিত এলাকা সুনির্দিষ্ট থাকবে। বিশেষ সুরক্ষিত এলাকায় কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ, ইটভাটা, কলকারখানা স্থাপন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতীত কোনো খনন করা যাবে না।

আইনের খসড়ায় বলা হয়, দেশে প্রাপ্ত ও জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ বা প্রত্নবস্তুর বাজারমূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। এগুলো অমূল্য সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হবে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রত্নসম্পদ মালিকের ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারণ করা যাবে। ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক পর্যায়ে কেউ প্রত্নসম্পদ বেচাকেনা বা সংগ্রহ করতে পারবেন না। তবে সরকারি মালিকানাধীন অথবা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন জাদুঘর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে অবহিত করে প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ করতে পারবে।

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অথবা অন্য কোনো আইনসিদ্ধ সূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে থাকলে সেসব সম্পদের প্রমাণাদি অধিদপ্তরকে দিতে হবে। সেগুলো সংগ্রহে রাখা যাবে; কিন্তু হস্তান্তর করা যাবে না। কোনো অস্থাবর প্রত্নসম্পদ বা প্রত্নবস্তু বা প্রত্নসম্পদের অংশবিশেষ সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশে প্রেরণ করা যাবে না। এর ব্যত্যয় শুল্ক আইনের আওতায় চোরাচালান হিসেবে গণ্য হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আইনটি ১৯৭৬ সালে একবার সংশোধন প্রণয়ন করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরাকীর্তি রক্ষা ও সংরক্ষণের তিনটি আইন আছে। ট্রেজারার্স ট্রুভ অ্যাক্ট ১৮৭৮, অ্যানসিয়েন্ট মনুমেন্ট প্রিজারভেশন অ্যাক্ট ১৯০৪, অ্যান্টিকুইটিজ অ্যাক্ট ১৯৪৭। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রণীত এই তিনটি আইন এখনও বহাল আছে। দিনে দিনে অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে। প্রত্ন ও সাংস্কৃতিক সম্পদ এখন নানাভাবে ও নানা কৌশলে লুট করা হচ্ছে। কালেভদ্রে এই চোরেরা ধরা পড়ে। কঠিন আইন না থাকায় তারা পার পেয়ে যায়। 

ট্রেজারার্স ট্রুভ আইনে বলা হয়েছে, প্রত্নসম্পদ প্রাপ্তির সময় থেকে মাটির ওপরে ও নিচে থাকা যে কোনো বস্তু ১০০ বছরের পুরোনো হলেই তার মালিক সরকার। এই বস্তু নিকটের ট্রেজারিতে জমা করা বাধ্যতামূলক।