ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আবারও রসিক মেয়র মোস্তফা

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২

আবারও রসিক মেয়র মোস্তফা

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে বিপুল ভোটে আবারও মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ১২টায় রংপুর শিল্পকলা একাডেমি নির্বাচনী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মোস্তাফিজার রহমানকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।

তিনি জানান, ২২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে লাঙল প্রতীকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান। তিনি পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট।

ভোটের মাঠে মেয়র পদে লড়েছে ৯ জন। অন্য প্রার্থীদের মধ্য বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান ডাব প্রতীকে পেয়েছেন ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন (গোলাপ ফুল) পেছেছেন ৫ হাজার ৮০৯, বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান (মশাল) পেয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু (দেয়ালঘড়ি) পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬৪, মেহেদী হাসান বনি (হরিণ) পেয়েছেন ২ হাজার ৬৭৯ ভোট।

নির্বাচনের ফলাফলে সন্তুষ্ট হয়ে বিজয়ী প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, বিজয়ী এবং পরাজিত সব মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় রংপুরকে মডেল নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এসময় ভোটাররা তাকে ভোট দিয়ে আবারও মেয়র পদে নির্বাচিত করায় ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

এবার রংপুর সিটিতে প্রথমবারের মতো ২২৯টি কেন্দ্রের সবগুলোতে ইভিএমে ভোট দেন ভোটাররা। শীতের কনকনে সকাল উপেক্ষা করেই ভোটাররা সকাল থেকে কেন্দ্রে উপস্থিত হন। তবে শীতের তীব্রতা কাটিয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে বাড়তে থাকে ভোটার উপস্থিতি। কিন্তু ইভিএম স্লো হবার কারণে ভোটগ্রহণে ধীরগতি পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটাররা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন।

সকাল সাড়ে নয়টা নগরীর আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এর আগে সোয়া নয়টার দিকে ভোটকক্ষে ঢুকে তিনি ইভিএম ত্রুটির কারণে ভোট দিতে পারেননি বলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানান। এর পনেরো মিনিট পর তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল বেলা দেড়টার দিকে লালকুঠি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

বিকেল সাড়ে চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হলেও কিছু কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসা ভোটাররা শেষ পযন্ত ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে অনেকেই ইভিএম বিড়ম্বনার শিকার হয়ে ভোট দিতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেছেন।

ইভিএম ত্রুটি বা স্লো ভোটগ্রহণ নিয়ে খোদ প্রার্থীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী কোনো আপত্তি না জানালেও একাধিকারবার ইভিএম নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ভোটারদের অভিযোগ তুলে ধরেও তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ভোটগ্রহণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানান। সাংবাদিকদের কাছে একই অভিযোগ করেন ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল।

নির্বাচনকে ঘিরে ছিল ছয় স্তুরের নিরাপত্তা বেষ্টনি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জনের এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৮৬টি কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়।

এছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ করা হয় ৩৩ জন নির্বাহী হাকিম। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। র‍্যাব-বিজিবির একাধিক টিম মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত ছিল। তারা ভোটের আগে ও পরে মোট পাঁচদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন।

২২৯টি ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৪৯টি ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোট হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র ও কক্ষ মিলে ১ হাজার ৮০৭ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এরমধ্যে এবার তালিকায় ছিল ভোটার চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৬ জন, পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন।

এ নির্বাচনে ২২৯ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ১ হাজার ৩৪৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া পোলিং অফিসার ছিলেন দুই হাজার ৬৯৮ জন। মোট ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬৩ জন। সর্বোপরি নির্বাচনে এবার ৬৫.৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার এক লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট।

২০১২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। ওই বছর ভোটার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও নারী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন।