ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গল্পটা ৮৩ বছর আগের

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১২ জুন ২০২০

গল্পটা ৮৩ বছর আগের

গল্পটা ৮৩ বছর আগের। ১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর। ইংলিশ ফুটবলের ২য় বিভাগের দল আইলিংটন কোরিন্থিয়ান্সের সঙ্গে ঢাকা একাদশের ম্যাচ দেখতে যেদিন কানায় কানায় পূর্ণ ছিল পল্টন ময়দান। পাখি সেনের একমাত্র গোলে সেদিন জয়ের আনন্দ নিয়েই ঘরে ফিরেছিল স্বাগতিক দর্শকরা। যেটা আবার ছিল ইংলিশ কোনো পেশাদার ক্লাবের ভারতে মাটিতে প্রথম হার। যে জয়ে নতুন মাত্রা পায় ঢাকার ফুটবল।

উত্তরে চানমায়ী পাহাড় আর দক্ষিণে ঘন জঙ্গল; তার পাশেই সুদৃশ্য এক বাগানবাড়ি। এটাই এক সময়ে ছিল ভাইসরয় হাউস অফ ইন্ডিয়া বর্তমানে বঙ্গভবন। বাড়িটির সামনেই নান্দনিক এক মাঠ। সেটাই আজকের পল্টন ময়দান। ১৯৩০ থেকে এ পল্টন ময়দান ছিল ঢাকায় ফুটবল খেলার একমাত্র নির্দিষ্ট স্থান। এর বাইরে লক্ষ্মীবাজার, ভিক্টোরিয়া, ওয়ারী ও জগন্নাথ হলের মাঠে হতো প্রথম বিভাগ ফুটবল।

এর তিন বছর বাদে তেত্রিশে এ বঙ্গের ফুটবলকে সামষ্টিক উন্নয়নের রূপরেখা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করা হয়। পি গুপ্ত হন সাধারণ সম্পাদক। ১৯৩৬ সালে পূর্ব বাংলায় যাত্রা শুরু ঢাকা মোহামেডানের।

সাল ১৯৩৭। ভারতবর্ষ তথা বাঙলা তথা ঢাকার ফুটবলের জন্য এক স্বর্ণালী বছর। ৩৩ থেকে ৩৯ টানা ৭ বছর বিলেতি ক্লাব আইলিংটন কোরিন্থিয়ান্স ৯৯টি খেলায় অংশ নিতে সফর করে ৪টি মহাদেশ। এর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে আয়োজিত হয় ৩২টি ম্যাচ। সারা দুনিয়ার দলগুলোকে নাকানিচুবানি খাওয়ানো সেই কোরিন্থিয়ান্স জিততে পারেনি কেবল ঢাকায় এসে।

প্রথম ম্যাচে সফরকারীরা ১-০ গোলে হেরে যায় ঢাকা একাদশের কাছে। গোলদাতা ছিলেন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ও কিশোরগঞ্জের সন্তান পাখি সেন। দুই আনার টিকিটে শীতের বিকেলের মিঠে রোদের আমেজে সেদিন পল্টন ময়দান মেতেছিল ২০ হাজারের বেশি সমর্থকের চিৎকারে। পরে কোরিন্থিয়ান্স যায় চট্টগ্রামে। সেখানে ফুটবল দেখতে হাজির ছিল ৭৭ হাজার দর্শক।

ঢাকায় প্রতি বছর নিয়মিত লিগের পাশাপাশি রোনাল্ডো শিল্ড নকআউট ফুটবল টুর্নামেন্টও হতো। ক্লাবগুলো ছাড়াও যেখানে অংশ নিতো বিভিন্ন কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। এমনকি আসরের বেশ কয়েকটি ট্রফির শিরোপা জিতেছিলো ঢাকা হল, জগন্নাথ হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল।

তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে ধীরে ধীরে আরো মাথা তুলে দাঁড়ায় পূর্ববঙ্গের ফুটবল। ১৯৪৩ সালের মধ্যে আইএফএ শিল্ডে পদ্মাপার থেকে অংশ নেয় ওয়ারী, ভিক্টোরিয়া, বগুড়া টাউন, খুলনা টাউন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাউন, বরিশাল ডিএফএ, কুষ্টিয়া শিবকালী, খুলনা মুসলিম, হবিগঞ্জ ফ্রেন্ডস, ফরিদপুরসহ মোট ১১টি ক্লাব। যা এপার বাঙলার জন্য ছিল রীতিমত গর্বের বিষয়।

গাজীপুর কথা