ঢাকা,  বুধবার  ০৮ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জার্সি জোয়ারে ভাসছে দেশ, মিলছে ১০০ থেকে দুই হাজারে

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৪:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০২২

জার্সি জোয়ারে ভাসছে দেশ, মিলছে ১০০ থেকে দুই হাজারে

জার্সি জোয়ারে ভাসছে দেশ, মিলছে ১০০ থেকে দুই হাজারে

পশ্চিমবঙ্গে একটি প্রবাদ বেশ প্রচলিত, যে বাঙালি ফুটবল পছন্দ করে না তাকে বিশ্বাস করো না। বাস্তবেই বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ফুটবল। অন্য সময় কিছুটা নিষ্প্রাণ থাকলেও বিশ্বকাপ এলে চারদিকে বাড়ে কোলাহল। শীতের শেষে প্রকৃতি যেমন নতুন করে জেগে ওঠে, সেভাবেই প্রতি বিশ্বকাপে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় বাঙালির ফুটবল সত্তা।

সাধারণত প্রতি চার বছর পরপর আয়োজিত হয় বিশ্বকাপ ফুটবল। তবে এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। জুন-জুলাইয়ের বদলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বসছে বিশ্বকাপের আসর। তাই কাতারে অনুষ্ঠিতব্য এবারের প্রতিযোগিতা মাঠে গড়াচ্ছে সাড়ে চার বছর পর।

কখনোই ফুটবল বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বলা ভালো, মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জনের কাছাকাছিও যেতে পারেনি লাল-সবুজরা। প্রতিবারই বাছাইপর্ব থেকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ফিফা র‍্যাংকিংয়ে একদম পেছনের সারিতে থাকলেও দেশের মানুষের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা কোনোকালেই কম ছিল না।

ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে কাতার বিশ্বকাপ শুরুর সময়। সেই সঙ্গে সবার মাঝে বাড়ছে উন্মাদনাও। বিশ্বকাপ উন্মাদনার অন্যতম অনুষঙ্গ ফুটবল জার্সি। বলা চলে জার্সি না পরলে প্রকৃত ফ্যানদের কাছে বিশ্বকাপ ঠিক জমে না। তাই আসর শুরুর আগেই নিজেকে প্রিয় দলের জার্সিতে রাঙিয়ে নিতে চেষ্টা করেন সবাই।

 

ভ্যানে খুব স্বস্তায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দেশের জার্সি

বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর এক সপ্তাহ আগে জার্সির বাজার ঘুরে দেখেছেন ডেইলি বাংলাদেশের প্রতিবেদক। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা? জার্সির দরই বা কত? ফুটবল পাগল মানুষদের সেসব তথ্য জানাতেই আজকের আয়োজন।

বর্তমানে দেশের বাজারে কয়েকরকমের জার্সি বিক্রি হচ্ছে। যেখানে কাপড়ের ধরণভেদে ১০০ টাকা থেকে দাম শুরু হয়ে জার্সি পাওয়া যাচ্ছে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যে।

গুলিস্তানে দেশের সবচেয়ে বড় স্পোর্টস মার্কেট অবস্থিত। সেখানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভ্যানের ওপরে অনেকেই জার্সি বিক্রি করছেন। এসব জার্সি ১০০ থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া যায়। সেখানে বলতে গেলে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সি সংখ্যাই বেশি। এসব জার্সিতে দলের সবচেয়ে বড় তারকার ছবিও যুক্ত থাকছে।

যেমন আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসি, ব্রাজিলের জার্সিতে থাকছে নেইমারের ছবি। অন্য কোনো দেশের জার্সি অবশ্য বিক্রি হচ্ছে না। এ বিষয়ে জার্সি বিক্রেতা রঞ্জু মিয়া জানান, নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি অনেক চাকুরীজীবীও তাদের কাছে থেকে পণ্য কিনে থাকেন। মূলত কম মূল্যই তাদের জার্সির বেশি চাহিদা হওয়ার বড় কারণ।

 

আর্জেন্টিনার জার্সিই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রায় সব বিক্রেতা

এছাড়া দেশে আরো কয়েকধরনের জার্সি পাওয়া যাচ্ছে, বাজারে যার প্রচলিত নাম থাই জার্সি। এসব জার্সির আবার বেশ কিছু এডিশন রয়েছে। যেখানে নরমাল, প্রিমিয়াম, থাই ও প্লেয়ার এডিশনে আলাদা আলাদা মূল্যে জার্সি বিক্রি হয়।

থাই জার্সির মাঝে প্লেয়ার এডিশনের জার্সিই সেরা। বিক্রেতাগণের মতে, এটা ঠিক আসল জার্সির অবিকল কাপড় ও ডিজাইনে তৈরি। সেরা মান ও ডিজাইন হওয়ায় এই জার্সির মূল্য সবচেয়ে বেশি। পাইকারি মূল্যে বর্তমানে হাজার টাকারও ওপরে এসব জার্সি বিক্রি হচ্ছে। শোরুমে যার মূল্য দাঁড়ায় ১৭০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত। 

তবে মানে ভালো হওয়ায় তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই প্লেয়ার এডিশনের জার্সির দিকে ঝুঁকছেন। এ বিষয়ে জার্সি কিনতে আসা ব্রাজিল ফুটবলভক্ত ইসতিয়াক বলেন, প্লেয়ার এডিশনের জার্সি মানে সেরা, পরতেও আরাম। যেহেতু প্রিয় দলের জার্সি, কিছুটা বেশি টাকা লাগলেও সেরাটাই নিতে চাই।

শুধু ছেলেরাই নয়, মেয়েরাও প্রতিনিয়ত জার্সির দিকে ঝুঁকছে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় ঢাকার উত্তরা নিবাসী নুসরাত ইশার সঙ্গে। তিনি আর্জেন্টিনার অ্যাওয়ে ভার্সনের জার্সি কিনতে এসে জানান, জার্সি এখন শুধু পরতে হবে বলেই পরা নয়। এটি ফ্যাশনেরও অংশ। তাই মেয়েরাও দিন দিন জার্সি নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে। 

 

বিভিন্ন শোরুমে জার্সি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

প্লেয়ার এডিশনের পর তরুণদের ফুটবলভক্তদের মাঝে ফ্যান এডিশনের জার্সির চাহিদা বেশি। যেখানে নির্দিষ্ট দলের অফিসিয়াল জার্সির মূল ডিজাইনের সঙ্গে এই জার্সির প্রায় পুরোপুরি মিল থাকে। তবে কাপড়টা থাকে কিছুটা আলাদা। এগুলোর দাম প্লেয়ার এডিশন জার্সির তুলনায় ২-৩০০ টাকা কম। 

শোরুমগুলোতে প্লেয়ার ও ফ্যান এডিশনের জার্সির পাশাপাশি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির জার্সিও বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে জার্সির মান আশানুরূপ নয় বলেই জানান গুলিস্তানের কোয়ালিটি স্পোর্টসের একজন বিক্রেতা। এসবের পাশাপাশি রাস্তায় হকাররা নরমাল জার্সি বিক্রি করছেন, যা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকার মাঝে কিনতে পারছেন ফুটবলভক্তরা।

নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সাধ্যের মাঝে সাধ মেটানোর জন্য সবধরণের জার্সিই পাওয়া যাচ্ছে দেশের বাজারে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার জার্সির চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন নানারকমের জার্সি বিক্রেতারা। এরপরের স্থানেই আছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের জার্সি বিক্রির হার।

 

জার্সি কেনার আগে দেখে নিচ্ছেন ক্রেতারা

সবমিলিয়ে বলা যায়, যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে জার্সির চাহিদা। বিশ্বকাপে প্রিয় দলের পছন্দের জার্সি পরে খেলা দেখার অনুভূতি অন্যরকম। এছাড়া যেকোনো জায়গাতেই জার্সি পরে সহজে যাওয়া যায়। আর এ কারণে ভবিষ্যতেও জার্সির বাজার আরো বড় হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

খেলাপাগল বাঙালির জার্সিপ্রীতি বিশ্বকাপ কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে আরো বাড়ছে। সামনে এ ধারা যে আরো বাড়বে, তা নিশ্চিত।