ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ময়ূর সিংহাসন, হিরার অন্তর্বাস! ভারতীয় রাজাদের বিলাসযাপনের যত চিহ্ন

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ৩ মার্চ ২০২৩

ময়ূর সিংহাসন, হিরার অন্তর্বাস! ভারতীয় রাজাদের বিলাসযাপনের যত চিহ্ন

ময়ূর সিংহাসন, হিরার অন্তর্বাস! ভারতীয় রাজাদের বিলাসযাপনের যত চিহ্ন

ময়ূর সিংহাসন হোক বা কোহিনুর হিরা— ভারতের ইতিহাসের দিকে নজর দিলে এমন মূল্যবান অনেক কিছুর খোঁজ পাওয়া যায়। রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে এমন কিছু অদ্ভুত জিনিসের সন্ধান পাওয়া যায়, যা প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই সাধারণ জিনিসগুলোই এমন প্রাচুর্যের মোড়কে মুড়িয়ে রেখেছিলেন রাজারা, যা শুনলে বিস্মিত হতে হয়।

সময়কাল ১৮ শতক। বিশ্বের বাজারে তখন গোলকোন্ডার হিরের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। হায়দরাবাদে তখন মীর ওসমান আলি খানের রাজত্ব। ইতিহাসবিদদের দাবি, ১৮ শতকের সর্বশেষ ধনী সম্রাট ছিলেন ওসমান।

মহারাজ ভূপিন্দর সিংহ- এর নারী সঙ্গীর সংখ্যা ছিল অনেক

নিজের সাম্রাজ্যেই যখন অঢেল হিরা রয়েছে, তখন তার ব্যবহারেও কার্পণ্য ছিল না ওসমানের। ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে জানা যায় যে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাপা রাখার জন্য তিনি এক চমৎকার পেপারওয়েট ব্যবহার করতেন।

ওসমানের সেই পেপারওয়েট ছিল আবার হিরে দিয়ে তৈরি। কোটি কোটি অর্থ খরচ করে ১৮৫ ক্যারাট হিরে দিয়ে পেপারওয়েটটি তৈরি করা হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদদের দাবি। ১৬১২ সাল। মহীশূর সাম্রাজ্যের সেই সময় বিশাল প্রতিপত্তি। মহীশূরের সিংহাসনে তখন তিরুমালারাজের শাসন। সম্রাট তার রানিদের গয়নায় মুড়িয়ে রেখেছিলেন। সাম্রাজ্য জুড়ে তখন রাজপ্রাসাদের রাজকীয় ‘গয়নার বাক্স’ নিয়েই আলোচনা। কিন্তু ওয়াদিয়াররা মহীশূর সাম্রাজ্য দখল করার সঙ্গে সঙ্গে কোটি কোটি টাকা মূল্যের গয়নাগুলোও বাজেয়াপ্ত করেন।

রানি আলামেলাম্মা গয়না হারানোর দুঃখে কাবেরী নদীর পানিতে ঝাঁপ দেন। কিন্তু প্রাণত্যাগ করার আগে ওয়াদিয়ারদের অভিশাপ দিয়ে যান তিনি। আলামেলাম্মা বলেন, ‘তালাকাড়ুর সমস্ত উর্বর জমির মৃত্যু হোক, মালাঙ্গিতে ঘূর্ণিঝড় হোক এবং ওয়াদিয়ার বংশের রাজারা যেন তাদের সন্তানদের মুখ কোনোদিন দেখতে না পান।’

শোনা যায়, অভিশাপের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ওয়াদিয়াররা রানি আলামেলাম্মার একটি বিশাল মূর্তি নির্মাণ করেন। তার পরেও শাপমুক্ত হননি তারা। গয়না দখল করেছিলেন বলে ৪০০ বছরের পুরনো অভিশাপ বয়ে নিয়ে বেড়ায় ওয়াদিয়ার বংশ।

বর্তমানে ওয়াদিয়ার রাজপরিবারকে আগলে রয়েছেন যদুবীর কৃষ্ণদত্ত ছমরাজ ওয়াদিয়ার। তিনি ওয়াদিয়ার বংশের সম্রাট শ্রীকান্তদত্ত নরসিংহরাজ ওয়াদিয়ারের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। ইতিহাসবিদদের দাবি, সন্তানহীন অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন সম্রাট শ্রীকান্তদত্ত। তাই দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের হাতে দায়িত্বভার অর্পণ করে গিয়েছিলেন তিনি।

বিচিত্র শখের জন্য ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ নাম উঠেছিল জয়পুরের তৎকালীন সম্রাট মহারাজ দ্বিতীয় সাওয়াই মাধো সিংহের। ইংল্যান্ড ভ্রমণে যাওয়ার কথা ঠিক হয়েছিল সম্রাটের। কিন্তু সম্রাটের ইচ্ছা, সুদূর ইংল্যান্ডে গঙ্গাজল নিয়ে যাবেন তিনি। গঙ্গাজল ধারণ করার জন্যই বিশালাকার পাত্র তৈরির নির্দেশ দিলেন সম্রাট।

ইতিহাসবিদদের দাবি, মোট দুইটি রুপার বিশালাকার পাত্রে গঙ্গাজল নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন মহারাজ দ্বিতীয় সাওয়াই মাধো সিংহ। ১৪ হাজার রৌপ্যমুদ্রা গলিয়ে এই পাত্র দুইটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯১১ সাল। 

জুনাগড়ের সিংহাসনে রাজত্ব করছেন শেষ সম্রাট তৃতীয়  মুহাম্মদ মহবত খান। সম্রাটের একটি মাত্র শখ কুকুর পোষা। রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে আটশোটি কুকুর পুষতেন সম্রাট। প্রতিটি কুকুরের জন্য আলাদা আলাদা ঘরের ব্যবস্থা ছিল প্রাসাদে। প্রত্যেকের পরিচর্যার জন্য ছিল আলাদা কর্মচারী। কুকুরগুলোর ঘরে টেলিফোনও ছিল বলে দাবি করেন ইতিহাসবিদেরা। পোষ্যেরা অসুস্থ হলে রাজপ্রাসাদে তাদের চিকিৎসা করাতেন না সম্রাট তৃতীয় মুহাম্মদ মহবত খান। ব্রিটেনের চিকিৎসকদের দিয়ে পোষ্যদের চিকিৎসা করাতেন তিনি।

সম্রাট তৃতীয় মুহাম্মদ মহবত খান বর্তমানের হিসাবে ২০ লাখ টাকা খরচ করে তার প্রিয় পোষ্য রোশানারার বিয়ে দিয়েছিলেন। তখনকার দিনে ২০ লাখ টাকা যে বর্তমানে কত হাজার কোটি টাকার সমান হতে পারে, তা ভাবলেও অবাক হতে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে লর্ড আরউইনকেও নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু আরউইন সেই নিমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

১৯০০ সালে পটিয়ালার সিংহাসনে আরোহণ করছিলেন মহারাজ ভূপিন্দর সিংহ। তার নারী সঙ্গীর সংখ্যা ছিল অগুনতি। ৮৮ জন সন্তান-সন্ততি ছিল তার। মূল্যবান ধনরত্নের প্রতিও আগ্রহ ছিল তার। হিরা-পান্না দিয়ে নানা রকম গয়না বানাতেন মহারাজ ভূপিন্দর সিংহ। হিরা দিয়ে অন্তর্বাসরূপী গয়না বানিয়েছিলেন তিনি। সব গয়নাগাটির মধ্যে এই হিরার গয়নাটিই তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল।

ডমিনিক ল্যাপিয়ের এবং ল্যারি কলিন্সের লেখা ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ বইয়ে মহারাজ ভূপিন্দর সিংহের ব্যক্তিগত জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই বইয়ে মহারাজের এক বিশেষ প্রথার উল্লেখ করা হয়েছে। সম্রাট নাকি বছরে এক বার তার সঙ্গীদের সামনে নগ্ন অবস্থায় হাজির হতেন। সম্রাটের পরনে থাকত শুধুমাত্র হিরার অন্তর্বাস।

‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ বইয়ে লেখা রয়েছে যে, সম্রাট ভূপিন্দর সিংহের যৌনাঙ্গ নিয়ে নানা রকম ভুল ধারণা ছিল সাম্রাজ্যের অধিবাসীদের। তারা বিশ্বাস করতেন, মহারাজের যৌনাঙ্গে কোনো অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে যার জন্য তাদের সাম্রাজ্যে কোনো অশুভ শক্তির ছায়া পড়ে না।

সূত্র: আনন্দবাজার