ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ববি গবেষণাগারে এলো দেশের প্রথম রি-ইউজেবল ক্লোথ প্যাড

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ৩ অক্টোবর ২০২২

ববি গবেষণাগারে এলো দেশের প্রথম রি-ইউজেবল ক্লোথ প্যাড

স্টেপস এহেডের ডিজাইনে পরিবেশবান্ধব রি-ইউজেবল ক্লোথ প্যাড।

নারীরা মাসিককালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সাধারণত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বাজারে প্রচলিত সব স্যানিটারি ন্যাপকিন একবারই ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নিজস্বভাবে ব্যবহারের জন্য ‘রি-ইউজেবল ক্লোথ প্যাড’ তৈরি ও বাজারজাত করা হচ্ছে না। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিলআফরোজ খানমের প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্টেপস এহেড’ প্রথমবারের মতো নিজস্ব ল্যাবে বিভিন্ন ডিজাইনের সাশ্রয়ী, সুলভ ও পরিবেশবান্ধব এ ধরনের প্যাড ডিজাইন করেছে। এরই মধ্যে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহযোগিতায় উৎপাদন শুরু হয়েছে।

স্টেপস এহেড মনে করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে উচ্চমূল্যের সিঙ্গেল ইউজ স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে ‘রি-ইউজেবল ক্লোথ প্যাড’ এর মাধ্যমে প্রান্তিক ও দরিদ্র নারীদের কাছে খুব সহজেই মাসিককালীন স্বাস্থ্যসুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

প্রথম দিকে মেয়েদের জীবনকে আধুনিক করার ক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আবিষ্কৃত এই প্যাড পিরিয়ডকালীন অনেক অস্বস্তিও কমিয়েছিল। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততই এই প্যাড ব্যবহার সম্পর্কে অসচেতনতা জন্ম দিচ্ছে নানাবিধ সমস্যা।

গবেষণা বলছে, একজন নারী তার জীবনে পুরো মাসিককালীন সময়ে গড়ে ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার সিঙ্গেল ইউজ প্যাড বা বাজারের প্রচলিত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। এ ধরনের প্যাডে বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়। যেমন: সুগন্ধিযুক্ত ক্যামিকেল, ক্যামিকেল জেল, রেসিডিউস্ এবং এডহেসিভ। একই সঙ্গে এ ধরনের স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি হয় প্লাস্টিক, কটন, সিনথেটিক ফাইবার এবং উড পাল্প এর সমন্বয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে বিভিন্ন কীটনাশক এবং উদ্ভিদনাশক। একবার ব্যবহারের পর বাজারে প্রচলিত এ ধরনের সিঙ্গেল ইউজ স্যানিটারি ন্যাপকিনের গন্তব্য হয় নদীনালা, সাগরের তলদেশে অথবা মাটির স্তূপে।

একাধিক গবেষণা থেকে জানা যায়, এ ধরনের সিঙ্গেল ইউজ প্যাডে অপচনশীন উপাদান থাকায় তা মাটি বা পানির সঙ্গে মিশে যেতে সময় লাগে ৮০০ বছর। এটি বর্তমানে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বব্যাপী এধরণের দূষণ সৃষ্টিকারী সিঙ্গেল ইউজ স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে কাপড়ের তৈরি ‘রি-ইউজেবল ক্লোথ প্যাড’ কে টেকসই সমাধান হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ ধরনের প্যাড বায়োডিগ্রেডেবল হওয়ায় সহজেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এছাড়াও ব্যাবহারের পর ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে প্রায় ৩-৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, তাই এটা সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। এটা তৈরিতে কোনো ধরনের ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয় না, বিধায় এটা খুবই স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক।

স্টেপস এহেডের ভলান্টিয়ার নুরেন নাহিয়ান খুশবু জানান, ‘ধীর গতিতে হলেও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার এখন গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। প্যাড যেহেতু টাকা দিয়ে কিনতে হয়, সেক্ষেত্রে প্যাডের খরচ সাশ্রয় করার জন্য গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের মধ্যে একটি প্যাড অধিক সময় ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা যায়। যা জরায়ুর জন্য ভয়াবহ রকমের খারাপ। এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের লক্ষে এবং প্রান্তিক নারীদের কথা বিবেচনায় রেখে প্রথমবারের মতো স্টেপস এহেড সফলভাবে তৈরি করল রি-ইউজেবল ক্লোথ প্যাড”।

এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও স্টেপস এহেডের প্রতিষ্ঠাতা দিলআফরোজ খানম বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। করোনার প্রভাবে কিছুটা ব্যাহত হলে পরবর্তীতে আমরা এটার সব কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। 

এই প্যাডের প্রসার ও বিস্তারে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে বদ্ধপরিকর তারা। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সহায়তা কামনা করছে তারা।

প্রসঙ্গত, স্টেপস এহেড ২০২১ সালের জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত একটি সংগঠন। লিঙ্গ সমতা এবং সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ‘স্টেপস এ্যাহেড’ এর প্রতিষ্ঠাতা দিলআফরোজ তানিয়াকে ইউএনভি বাংলাদেশ, ভিএসও বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এবং অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইন্সপায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড (আইডব্লিউভিএ) ২০২২ দেওয়া হয়।