ঢাকা,  মঙ্গলবার  ০৭ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, চকের গুড়া, পাউডার দিয়ে বানানো হচ্ছে নকল ইয়াবা

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ৩ জানুয়ারি ২০২১

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, চকের গুড়া, পাউডার দিয়ে বানানো হচ্ছে নকল ইয়াবা

মরণ নেশা ইয়াবা দেশের যুবসমাজের বড় একটা অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মেথামফেটামিন আর ক্যাফেইনের এক মিশ্রণ এই মাদক। তবে সম্প্রতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে ইয়াবা। নির্মাতারা বানাচ্ছে নকল ইয়াবা। মেয়াদোত্তীর্ণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, চকের গুড়া, ট্যালকম পাউডার, গ্লুকোজ, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, স্টিয়ারিক এডিস, ভ্যানিলা পাউডার এবং প্যারাফিনের মিশ্রণে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তৈরি হচ্ছে নকল ইয়াবা। এই মাদকে আসক্তরা না জেনেই এসব নকল ইয়াবা কিনছেন এবং সেবন করছেন। 

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রসায়ন পরীক্ষাগার সূত্র জানায়, দেশে প্রতিদিন জব্দকৃত ইয়াবা পরীক্ষা করতে দেখা গেছে, অন্ততপক্ষে চারটি নমুনা নকল প্রমাণিত হচ্ছে। সেখানে ইয়াবার মূল উপাদান অ্যামফেটামিনের কোনো অস্তিত্বই নেই। 

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ) মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন,  মাঝেমধ্যে আমরা ভেজাল ইয়াবা পাই। সেখানে অ্যাম্ফিটামিনের পরিমাণ অনেক কম থাকে অন্য ভেজাল মেশানো হয়। এমন কিছু প্রতারণার ঘটনা আমরা পেয়েছি যেখানে ইয়াবার নামে মশুর ডাল বা অন্য ওষুধ  প্যাকেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেমিক্যাল ল্যাবে পরীক্ষার আগেও আমরা দেখে গন্ধ বা আলামতে শনাক্ত করতে পারি। তবে অ্যামফেটামিন একেবারেই নেই এমন ইয়াবা পাওয়ার ঘটনা কম।   

স্বাস্থ্যবিদরা বলেন, নকল ইয়াবা ব্যবহারকারীদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। 

মাদকাসক্তদের চিকিৎসা নিয়ে যারা কাজ করছেন এমন দেশি বিশেষজ্ঞরা গণমাধ্যমকে বলছেন, এসব নকল ইয়াবা অনেকক্ষেত্রেই আসলগুলোর চেয়েও বেশি ভয়াবহ। এসব ইয়াবা কিডনি সমস্যা, লিভারে ইনফ্লামেশন, ক্ষুধামন্দা, মেজাজ বিগড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

সম্প্রতি নওগাঁ জেলা পুলিশ ৬৭ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক কারবারিকে আটক করে। সেই ইয়াবা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। দেখা গেছে, ৬৭ পিস ইয়াবার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নকল। এগুলোর মধ্যে অ্যামফেটামিনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না, জানায় পরীক্ষাগার সূত্র। 

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবি এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে প্রতিদিন পাঠানো ইয়াবা থেকে অন্ততপক্ষে ১০০টি নমুনা পরীক্ষাগারে পরখ করা হয়। নকল ইয়াবাগুলোর মধ্যে কিছু দেখতে হুবহু আসলের মতো। কিন্তু এদের মধ্যে অ্যামফেটামিন নেই। 

মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, দেশে নকল ইয়াবা ছড়ানোর ঘটনা সম্প্রতি বাড়ছে। যেহেতু এদের মধ্যে ইয়াবার মূল উপাদান অ্যামফেটামিনের অস্তিত্ব নেই, তাই আমরা এদের নকল ইয়াবা বলে থাকি। এছাড়া আমরা খেয়াল করেছি, মাদক চোরাচালানকারীরা যেসব ইয়াবা বিক্রি করছেন সেগুলোতেও নামমাত্র পরিমাণে অ্যামফেটামিন রয়েছে। সাধারণত একটি ইয়াবা ট্যাবলেটের ওজন হয় ১০০ মিলিগ্রাম। এতে থাকে ১৫-২০ মিলিগ্রাম অ্যামফেটামিন, ৩০-৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন এবং বাকিটা চকোলেট কোটিং উপাদান। দেখা গেছে, জব্দকৃত ইয়াবার ৫০ শতাংশের মধ্যে ২-৫ মিলিগ্রাম অ্যামফেটামিন রয়েছে।  

মূলত দেশে বিপুল চাহিদা থাকার কারণে ইয়াবা নকল করে বানানো হচ্ছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক সূত্র জানায়। নকল ইয়াবার বাইরে লাল রং থাকলেও ভেতরটা সাদা। ডিলাররা সাধারণত মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার সঙ্গে নকলগুলো মিলিয়ে দেয়। তারপর দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয়। এভাবেই নকল ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে, সেবনকারীদের হাতে হাতে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন