ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

অভাব-নদীভাঙন ঠেকাতে পারেনি শারমিনের জিপিএ-৫

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ১ আগস্ট ২০২৩

অভাব-নদীভাঙন ঠেকাতে পারেনি শারমিনের জিপিএ-৫

ফাইল ছবি

মাদারীপুর শিবচরের বন্দরখোলা ইউনিয়নের ভ্যানচালক আব্দুল কুদ্দুস। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালানো তার জন্য কষ্টকর। তবে অদম্য মনোবল থাকলে সব জয় করা সম্ভব, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে শারমিন।

গত সোমবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায়, স্থানীয় নুর উদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে শারমিন। শিবচর উপজেলার নদীভাঙন, চরাঞ্চল ও বন্যাকবলিত এলাকা বন্দরখোলা চরের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার। নদীভাঙন আর অভাব তাকে ঠেকাতে পারেনি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের পড়াশোনা ঠিক রেখেছে সে। তিন ভাইবোনের মধ্যে শারমিন মেজো।

তার স্বপ্ন সে উচ্চশিক্ষিত হয়ে দেশের সেবা করবেন। তবে এই স্বপ্নপূরণে বড় বাঁধা আর্থিক অসচ্ছলতা।

গত ২০২০ সালের বন্যায় পদ্মা নদীরভাঙনে ঘড়-বাড়ি সব হারিয়ে শারমিনের বাবা আব্দুল কুদ্দুস নিঃস্ব হয়ে পড়েন। নদী গর্ভে হারিয়ে যায় শারমিনের বিদ্যালয়। এরপর অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার পড়ালেখা। পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে টিনশেড করে শুরু হয় স্কুলের কার্যক্রম। তবে শারমিনের অদম্য ইচ্ছে শক্তি দমাতে পারেনি তার পড়ালেখার প্রবল আগ্রহ। সকালে মক্তবে প্রাইভেট ও বিকেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে শারমিন।

ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শারমিনের। সে বলে, ‘আব্বা ভ্যান চালায়। বয়স্ক লোক। নিয়মিত ভ্যান চালাতে পারে না।তাই ঘরে সব সময় অভাব লেগে থাকে। তবু বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মা-বাবা আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকেরাও আমার পাশে ছিল। টাকার অভাবে টিউশনি পড়তে না পারলেও বিদ্যালয়ের স্যারেরা পড়াশোনার ব্যাপারে আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে।’

সে আরও বলে, ‘আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। অনেক সময় গাড়ি ভাড়া না থাকলে হেঁটেই স্কুলে যেতাম। ঝড়, বৃষ্টি, তুফানেও স্কুলে অনুপস্থিত থাকিনি। নিয়মিত স্কুলে উপস্থিতি ও প্রতিদিন ৫/৬ ঘণ্টা বাড়িতে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা মাধ্যমে এ ফলাফল অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হয়ে এলাকার দরিদ্র মানুষদের সেবা করতে চাই।’

শারমিনের বান্ধবীর শিলা আক্তার বলে, শারমিন অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। তার লেখাপড়া দেখে আমরাও উৎসাহিত হয়েছি।

তার আরেক বান্ধবী রুবিনা আক্তার বলেন, শারমিনের লেখাপড়ার সাহস এবং মানসিকতা দেখেও তার কাছে আমরা পড়ালেখার বিষয়টা ভালো করে বুঝেছি। শারমিন একজন মেধাবী এবং দক্ষ নির্ভীক আমাদের স্কুলের মধ্যে।

শারমিনের বাবা আবদুল কুদ্দুস জানান, তাদের মেয়ে লেখাপড়ার বাইরে অন্য কোনো আবদার করেনি। অভাবের সংসারে তার অনেক শখ পূরণ করতে পারেননি। মেয়ের এই ফলাফলে তারা খুশি। তবে এখন তাকে কলেজে পড়াতে অনেক কষ্ট হবে। তাই সমাজের সবাইকে শারমিনের পড়ালেখার জন্য সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত। সে স্কুলে একজন মনোযোগী ছাত্রী হিসেবে সবার প্রিয় ছিল। পিছিয়ে পড়া একটা এলাকা থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করা মোটেও সহজ নয়। আমরা শিক্ষকেরা সব সময় তার পাশে ছিলাম। তার ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতা কামনা করছি।’