ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বাকৃবিতে জনপ্রিয় ফারুকের তিন টাকার দোকান

প্রকাশিত: ২১:২৫, ১৯ জুলাই ২০২৩

বাকৃবিতে জনপ্রিয় ফারুকের তিন টাকার দোকান

বাকৃবিতে জনপ্রিয় ফারুকের তিন টাকার দোকান

গরম কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলে ভাজা হচ্ছে জিলাপি। ভাজার পর ভেজানো হচ্ছে রসের শিরায়। আরেক দিকে তেলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে আলুপুরি। যেন দম নেওয়ার ফুরসত নেই।

১৭ বছর ধরে এভাবেই মুখরোচক ভাজাপোড়া তৈরি করে আসছেন ফারুক হোসেন। কারও কাছে যিনি ‘ফারুক মামা’, কারও কাছে ‘ফারুক ভাই’, আবার কেউবা শুধু ‘ফারুক’ বলেই সম্বোধন করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে অতিপরিচিত মুখ ফারুক হোসেন। তার জনপ্রিয় দোকান ‘ফারুক নাস্তার দোকান’। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকলের কাছে যেটি তিন টাকার দোকান হিসেবেই পরিচিত।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভাজাপোড়ার দাম তিন টাকা থেকে পাঁচ টাকা হয়ে গেছে। তবুও সবার মুখে মুখে থেকে গেছে তিন টাকার দোকান হিসেবেই। 

২০০৬ সালে বাকৃবির কামাল-রণজিত মার্কেটের (কেআর মার্কেট) উত্তর দিকের ছোট একটি দোকানে ভাজাপোড়া বিক্রি শুরু করেন ফারুক হোসেন। ১৭ বছর ধরে একই রকম জনপ্রিয় তার তৈরি শিঙাড়া, আলুপুরি, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, সমুচা ও চপ। তাই তো সরু গলি পেরিয়ে ছোট্ট দোকানটা চিনতে কারও অসুবিধা হয় না। 

বর্তমানে ফাস্টফুড ও নানাবিধ স্ট্রিট ফুডের মাঝেও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি ফারুক ভাইয়ের ভাজাপোড়ার দোকানের। বর্তমানে তিনজন কর্মচারী কাজ করেন। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে দোকানটি। তবে বিকেলের পর থেকে বেশি জমজমাট হয়ে উঠে। শিক্ষার্থীদের আনাগোনাও বেশি থাকে তখন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে ঘুরতে এলে এখানে আসতে ভুল করেন না। শুধু বাকৃবি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকেও মানুষ আসে তার এই নাস্তার দোকানে। কেউ দোকানের ভেতরে বসে নাস্তা করেন, কেউ খাবার নিয়ে পাশের গলিতে দাঁড়িয়ে খান, আবার কেউবা পার্সেল নিয়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা বিক্রি হয় এখানে। এর বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার থাকলে সেদিন বাড়তি কিছু আয়ের সুযোগ থাকে।

ফারুক হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে সুতিয়াখালি এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে বড় ছেলে ময়মনসিংহ কমার্স কলেজে ও মেজো ছেলে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। এই নাস্তার দোকানই তার আয়ের একমাত্র উৎস। নাস্তা বিক্রির টাকায় তার পরিবারসহ তিন কর্মচারীর জীবিকা নির্বাহ করেন। তবুও সবকিছু নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, আমি বাকৃবিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় বছর ধরে ফারুক ভাইয়ের দোকানে নাস্তা করি। এখানে সুলভ মূল্যে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মজাদার নাস্তা পাওয়া যায়। এজন্য এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের কাছে এত জনপ্রিয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুনতারিন ফারাহ বলেন, ফারুক মামার দোকান আমাদের কাছে খুবই পছন্দের একটি আড্ডার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর কেআর মার্কেটে যাওয়া মানেই ফারুক মামার তিন টাকার দোকানে একটু উঁকি দিতেই হবে। তবে মজার বিষয় হলো তিন টাকার দোকানে সবকিছু পাওয়া যায় পাঁচ টাকায়। আমরা হরহামেশাই ভাজাপোড়া খাই। আমাদের প্রায় সকল উৎসব বা আয়োজনে স্থান পায় তার বিখ্যাত ভাজাপোড়া। 

ঢাকা পোস্টকে ফারুক হোসেন বলেন, ১৭ বছর আগে এই দোকান শুরু করি। তখন ১ টাকা করে ছিল। এরপর ২ টাকা, ৩ টাকা হয়ে এখন পাঁচ টাকায় নাস্তা (শিঙাড়া, আলুপুরি, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, সমুচা ও চপ) বিক্রি করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই এখানে নাস্তা খেতে আসে, খুব ভালো লাগে। তিনজন কর্মচারী আছে। সবাই বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করে। সব মিলিয়ে দোকান,পরিবার, সন্তান নিয়ে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।