ঢাকা,  মঙ্গলবার  ০৭ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জানাজার সময় পাওনাদার দেখে শিক্ষক বাবার লাশ রেখে পালালেন সন্তানরা

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১৩ জুলাই ২০২৩

জানাজার সময় পাওনাদার দেখে শিক্ষক বাবার লাশ রেখে পালালেন সন্তানরা

আব্দুল আজিজ মৃধা

বাগেরহাটের শরণখোলায় আব্দুল আজিজ মৃধা (৭০) নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকালে মারা গেছেন। বুধবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। একটি মাদ্রাসার সামনে কবরও প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু জানাজার সময় ঘটে বিপত্তি। সমস্ত পাওনাদাররা এসে ভিড় করলেন জানাজাস্থলে। এ সময় বাবার পাওনাদারদের দেখে লাশ ফেলে পালিয়ে যান তার সন্তানরা।

এমন পরিস্থিতিতে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তার লাশ পড়েছিল উপজেলা সদরের রায়েন্দা কেন্দ্রীয় মসজিদের অজুখানার পাশে। পরে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিবারের লোকদের খুঁজে এনে দুপুর আড়াইটার দিকে জানাজা সম্পন্ন করে লাশ দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফালবাড়ি গ্রামের আব্দুল আজিজ মৃধা তাফালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন উপজেলা সদরের পাঁচ রাস্তা এলাকায়। প্রায় ছয় মাস ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলেন।

তার প্রথম সংসারের বড় ছেলে মতিয়ার রহমান বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী-সন্তানদের চাপে বাবা আমাদের কোনও খোঁজ নিতেন না। অসুস্থ হওয়ার পর কৌশলে তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে দ্বিতীয় স্ত্রী-সন্তানরা। কিন্তু বাবার কোনও দেনা শোধ করেনি তারা। জানাজার সময় পাঁচ জন পাওনাদার এসে টাকা দাবি করলে দ্বিতীয় ঘরের সন্তানরা লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফনের জন্য স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ জন্য উপজেলার মালিয়া আল-ফালাহ্ মাদ্রাসার কবরস্থানে তার কবর প্রস্তুত করা হয়েছিল। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজের মধ্যস্থতায় পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধে আশ্বস্ত করার পর জানাজা সম্পন্ন হয়। বাবার লাশ আমাদের গ্রামের বাড়িতে দাফনের ব্যবস্থা করি।

ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাসানুজ্জামান পারভেজ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবারের লোক ও পাওনাদারের সঙ্গে আলোচনা করে লাশের জানাজা শেষে তার প্রথম সংসারের বড় ছেলে মতিয়ার রহমানের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী-সন্তানদের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা জমি ও অর্থ উদ্ধার করে ঋণ পরিশোধ করা হবে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধান করে লাশের জানাজা ও দাফনের জন্য বলা হয়। পাওনাদাররা যাতে তাদের টাকা পেতে পারেন সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।