ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ০৯ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

স্বর্ণপদক জয়ী রুপালীর অনুপ্রেরণা মাশরাফি

প্রকাশিত: ১১:১০, ৯ জুলাই ২০২৩

স্বর্ণপদক জয়ী রুপালীর অনুপ্রেরণা মাশরাফি

স্বর্ণপদক জয়ী রুপালীর অনুপ্রেরণা মাশরাফি

জার্মানির বার্লিনে স্বর্ণপদক জয় করেছেন নড়াইলের বাক প্রতিবন্ধী রুপালী খাতুন। এ অর্জনে গর্বিত তার পরিবার।

স্বর্ণপদক জয়ী বাক প্রতিবন্ধী রুপালী খাতুনের বাবা টুকু মিয়া শেখ বলেন, মাশরাফির কারণে বিশ্ববাসী নড়াইলকে চিনেছেন। এখন আমার মেয়ের কারণেও চিনবে। আমি তাকে শুধু জন্ম দিয়েছি কিন্তু রুপালী নড়াইলের সন্তান, এই দেশের সন্তান। মাশরাফিকে অনুপ্রেরণা মেনে আমার মেয়ে সবার দোয়ায় একদিন বিশ্ব জয় করবে ইনশাআল্লাহ।

শনিবার (৮ জুলাই) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড গেমস বার্লিন (জার্মানি)-২০২৩ এ সাঁতারে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করায় রুপালী খাতুনকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

রূপালী (১৬) নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের তারাশি (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের বর্গাচাষি টুকু মিয়া শেখের মেয়ে। চার ভাই-বোনের মধ্যে রূপালী ছোট। বড় ভাইয়েরাও কৃষিকাজে নিয়োজিত। বোন সোনালী খাতুন ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। 

রুপালী খাতুনের বাবা টুকু মিয়া শেখ বলেন, অভাব অনটনের সংসারে প্রতিবন্ধী মেয়ে যেকোনো বাবার জন্যই চিন্তার কারণ। রুপালীর জন্মের পর চিন্তায় পড়লেও মেয়েটার দিকে অন্য সন্তানদের চেয়ে বেশি খেয়াল রাখতাম। তার রয়স যখন ৭ বছর তখন থেকেই সাঁতারে তার আগ্রহ। চাহিদা মতো সব দিতে পারি না তাই বাবা হিসাবে কষ্ট লাগে। 

নড়াইলের শিকদার ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিওর পরিচালক পান্নু আমাদের গ্রামে আসেন। তিনি রূপালীর সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তাকে সাঁতার শেখাতে চান। এরপর মরাচিত্রা নদীতে শুরু হয় রূপালীর সাঁতার প্রশিক্ষণ। একপর্যায় পান্নু ভাই রূপালীকে খুলনায় এবং পরে ঢাকায় সাতার প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন। গত কয়েক বছরে দেশের ভেতর ৭টি সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় রূপালী। তার মধ্যে ৬ টিতেই সে প্রথম হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েটা কথা বলতে পারে না। তবে ইশারায় সব বোঝাতে পারে। ইশারা ইঙ্গিতে বোঝায় মাশরাফির মতো বড় হতে চায় সে। জার্মানির বার্লিন থেকে সে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে আসছে। বাবা হিসাবে তার প্রতিটা অর্জনে আমার কলিজা ভরে যায়। আমাদের ভাই সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন আমার মেয়েটার দিকে সুদৃষ্টি দিলে দেশের হয়ে ভবিষ্যতে আরও ভাল অর্জন করবে ও সম্মান বয়ে আনবে। 

জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর সহধর্মিণী শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, জেলা ক্রীড়া অফিসার কামরুজ্জামন, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া ইউসুফ,সিকদার ফাউন্ডশনের পরিচালক সিকদার মনজুরুর রহমান পান্নু, রূপালীর গর্বিত পিতা টুকু মিয়া প্রমূখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে রুপালী খাতুন দুই ক্যাটাগরিতে স্পেশাল অলিম্পিকে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছেন যেটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। নড়াইলের সংসদ সদস্য বিশ্ববরেণ্য ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার জন্ম। এই জেলায় যোগদানের পূর্বে শুনেছি আর নিজ চোখে এখন দেখছি। সব ধরনের খেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নড়াইলের ছেলে-মেয়েরা সমানতালে প্রতিনিধিত্ব করছেন। যেখানে গুণীর কদর হয় না সেখানে গুণী জন্মায় না। রুপালী খাতুনের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। 

এর আগে স্বর্ণপদক জয়ী বাক প্রতিবন্ধী  রুপালী খাতুনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে ক্রেস্ট প্রদান করা হয় এবং জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা উপহার স্বরূপ দেওয়া হয় তাকে। 

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলায় স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক জুলিয়া সুকায়না, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাশ্বতী শীল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ মন্নু, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী কমিটির সদস্য সালমা রহমান কবিতাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, জার্মানির বার্লিনে ১৭১টি দেশের অংশগ্রহণে স্পেশাল অলিম্পিক সামার ওয়ার্ল্ড গেমস- ২০২৩-এর সাঁতার প্রতিযোগিতায় রুপালীসহ ৬ জন অংশ নেন। গত মাসের ১২ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।