ঢাকা,  সোমবার  ১৭ জুন ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বদলে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৬ মে ২০২৪

বদলে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি

ফাইল ছবি

দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরকে বদলে দিয়েছে একটি টার্মিনাল। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালটি একপ্রকার ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে এই টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে আয় করছে ১ হাজার কোটি টাকা। আর বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির অর্ধেকের বেশি হয়ে থাকে এই টার্মিনাল দিয়ে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের আয় সরকারি কোষাগারে দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য বন্দরের উন্নয়নকাজেও অনুদান হিসেবে ব্যয় হচ্ছে।

ইতিমধ্যে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুদান হিসেবে ৪৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বন্দর বছরে আয় করছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূলত বন্দরের কিছু টার্মিনাল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে দক্ষতা বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০০৭ সালে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এনসিটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়। এরপর বদলে যেতে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরের দৃশ্যপট। আগে যেখানে কনটেইনার খালাসের জন্য ব্যবসায়ীদের দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। বন্দর সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে চালু হওয়ার প্রথম বছরে এনসিটিতে বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছিল ৪৩৬টি। আর ২০২৩ সালে এনসিটিতে জাহাজ এসেছে ১ হাজার ১৯৭টি। অর্থাৎ, ১৬ বছরের ব্যবধানে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা বেড়েছে ৬৩.৫৭ শতাংশ। জিসিবি, সিসিটি, এনসিটি ও বহির্নোঙর মিলিয়ে ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে মোট ৪ হাজার ১০৩টি। এনসিটিতে জাহাজ জেটিতে এসে কনটেইনার খালাস এবং রপ্তানিপণ্য বোঝাই করে বন্দর ত্যাগ করতে সময় লাগছে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন দিন।

উল্লেখ্য, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ১১ লাখ টিইইউ হলেও এই টার্মিনালে বছরে ১৩ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। উন্নত যন্ত্রপাতি, আধুনিক প্রযুক্তি দক্ষ জনবল দিয়ে পরিচালনার কারণে ক্রমশ এই টার্মিনালে জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ।

বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বন্দর পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণে কিছু কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বন্দরের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এতে বন্দরের শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। তারা জানান, বিদেশি কোম্পানি বন্দরে কাজ করলে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকালীন তা হবে আত্মঘাতী।

বন্দর ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের আগে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য খালাস ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। বন্দরের জেটিতে একটি জাহাজ ভিড়তে বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থাকত গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিদিন বিলম্বের জন্য আকারভেদে প্রতিটি জাহাজকে জরিমানা বাবদ গুনতে হতো ১২ থেকে ২০ হাজার ডলার। এতে বেড়ে যেত ব্যবসার খরচ, পণ্য পরিবহন ব্যয়। বাড়তি এই টাকা শেষ পর্যন্ত বহন করতে হতো ভোক্তাকেই। বর্তমানে বহির্নোঙরে জাহাজের গড় অপেক্ষমাণ সময় ১২ দিন থেকে কমে নেমে এসেছে দুই থেকে আড়াই দিনে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ কমেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সাল থেকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে দেশের প্রথম টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনালও পরিচালনা করছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোয়াহেল বলেন, বন্দরসেবা সহজ করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জাহাজের গড় অবস্থান সময় কমে এসেছে। কনটেইনারের জট নেই বললেই চলে। আগামী মাসে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তিনি বলেন, বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বাড়াতে হলে এখানে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এই বিনিয়োগ দেশি ও বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত। 

পোর্ট ইউজার্স ফোরাম ও এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এ বিষয়ে বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে আধুনিক, দ্রুত সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তায় দেশি-বিদেশি সেবাগ্রহীতার আস্থা তৈরি করতে পেরেছে। তিনি বলেন, বন্দরের কিছু টার্মিনাল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে দক্ষতা বেড়েছে। সরকারি খাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সময় সাপেক্ষ। কিন্তু বেসরকারি খাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় দ্রুত। তার মতে, বন্দর পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখানে আরও উন্নতির সুযোগ আছে। এটি আরও গতিশীল করতে হলে জেটির সংখ্যা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজনের মতে, চট্টগ্রাম বন্দর আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেকটা ভালো অবস্থানে আছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের ফলে জেটিতে জাহাজের গড় অবস্থান সময় কমে এসেছে। ফলে এখন জাহাজজট নেই। তিনি বলেন, ভবিষ্যত আমদানি-রপ্তানির চাপ মোকাবিলায় বে-টার্মিনাল নির্মাণ দৃশ্যমান হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।