ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মায়ার টানে লাখো ভক্তের পদচারণায় লালন মেলা

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

মায়ার টানে লাখো ভক্তের পদচারণায় লালন মেলা

.

আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৩তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে বসেছে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের দল। সেখানে ভিড় জমাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আখড়াবাড়ি চত্বরে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। চত্বরের এক কিলোমিটার আগে থেকে সাধু, ভক্ত ও অনুসারীদের ঢল নেমেছে। লালন মেলা পরিণত হয়েছে লাখো মানুষের মিলন মেলায়।

দূরদূরান্ত থেকে আসা দেশি-বিদেশি ভক্ত-অনুসারীদের খণ্ড খণ্ডভাবে দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। দিনরাত গান ছাড়াও তারা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) থেকে তিন দিনব্যাপী শুরু হয়েছে লালন মেলা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়োজনে তিন দিনব্যাপী চলবে লালন মেলা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে অসংখ্য বাউল-ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এসেছেন লালন আখড়াবাড়িতে। এবারের লালন মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ফকির লালন শাহের অমর বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লালন মেলা উপলক্ষ্যে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন লাখো ভক্ত-অনুসারী ও দর্শনার্থীরা। ভক্ত-অনুসারী খণ্ডখণ্ডভাবে দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। লালনের বাণী ও আদর্শ নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। লালনের গানে গানে মুখরিত পুরো মেলা। অনুসারীরা লালন ফকিরের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে অস্থায়ীভাবে তৈরি করেছেন আস্তানা। লালন মেলায় কালি নদীর পাড়ে মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। আশপাশের এলাকায়ও হরেক রকম পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন মেলায় এক লাখেরও বেশি মানুষের পদচারণা মুখরিত। যতই সময় পার হচ্ছে ততই ভিড় বাড়ছে। মরমি সাধক ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার শহরতলি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক মারা যান। এখানে পরবর্তীতে লালন মেলার আয়োজন শুরু হয়। সেই থেকে লালন ভক্তরা প্রতি বছরই নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত এ উৎসব পালন করেন। সাঁইজির স্মরণে দিবসটি ঘিরে তিন দিনের অনুষ্ঠান হয় আখড়াবাড়িতে। লালন ফকিরের গানে গানে এখন পুরো এলাকা মুখরিত।

লালন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা বলেন, লালন মেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে। লালন ভক্ত  ও অনুসারীদের আস্তানাগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। তাদের গাওয়া গান শুনতে জড়ো হচ্ছেন অনেকে।

লালন একাডেমির কয়েকজন সদস্য বলেন, এবার মেলায় অন্যান্য বারের চেয়ে মানুষের ভিড় বেশি। এক লাখেরও বেশি ভক্ত-অনুসারি, সাধু-ফকির ও দর্শনার্থীরা এসেছেন। লালন মেলার প্রথম দিনেই ভিড় বেড়েছে। কুষ্টিয়ার আখড়াবাড়ির ভেতরে ও বাইরে যেন পা ফেলার জায়গা নেই। লালন শাহের গান শুনতে ও মেলায় ঘুরতে জড়ো হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। পুরো এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।

লালনের গানে-গানে মুখরিত ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি
তিন দিনব্যাপী লালন মেলা অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই সন্ধ্যায় আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। যা গাইবেন লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী ও ভক্তরা। মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে বর্ণিল পরিবেশের সৃষ্টি করছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, লালন মেলা উপলক্ষ্যে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে। মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই মেলা চালিয়ে আসছিল। প্রতিবছর ১ কার্তিক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়।