ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

৫০ বছরে ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, তলিয়ে গেছে বাসাবাড়ি

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ৬ অক্টোবর ২০২৩

৫০ বছরে ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, তলিয়ে গেছে বাসাবাড়ি

.

ময়মনসিংহে বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিতে নগরীর প্রায় সব এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে দোকানপাট ও বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে নগরবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতিউজ্জামান বলেন, আমাদের প্রত্যেক উপজেলায় বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র রয়েছে। সেই সব যন্ত্রের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ময়মনসিংহে ৩শ ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বিগত প্রায় পাঁচ দশকে যা সর্বোচ্চ।

এদিকে, ভারী বৃষ্টিতে নগরীর ড্রেনগুলো উপচে, সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। বৃষ্টির পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সরকারি হাসপাতাল, বাসা বাড়ি, দোকানে,মসজিদে ঢুকে পড়ে। বৃষ্টিতে পানিতে ভেসে গেছে জেলার বহু খামারের মাছ, তলিয়ে গেছে অসংখ্য পরিমাণ ধানখেত ও কৃষি জমি।

সড়কের ও ড্রেনের ময়লা পানি নগরীর নিচু এলাকার বাসা বাড়িতে ঢুকেছে। পানি ঢুকেছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দেয় রিক্সা, অটোরিক্সা ও গণ পরিবহনের। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

নগরীর গাঙ্গিনারপাড়, ব্রাহ্মপল্লী, কালিবাড়ি, বলাশপুর, ভাটিকাশর, কেওয়াটখালী, চরপাড়া, নয়াপাড়া, পুরহিতপাড়া, সানকিপাড়া, গুলকিবাড়ি, নতুনবাজার, কাচিঝুলি,কলেজ রোড, হামিদ উদ্দিন রোড, আকুয়া এলাকার চিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিভিন্ন এলাকার পানি কিছুটা কমলেও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের ভোগান্তি এখনও কমেনি।

নগরীর আর. কে মিশন রোড এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফ বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টিপাত হয়েছে ময়মনসিংহে। রাত ৯টার পর থেকেই আমাদের এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা শুরু হয়।

নগরীর ব্রাহ্মপল্লী এলাকার ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বাসার নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। ড্রেনের ময়লা পানির গন্ধে অতিষ্ঠ হচ্ছে এলাকার লোকজন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলাম জানান, হাসপাতাল চত্বরের কিছু এলাকা নিচু হওয়ায় পানি ঢুকে পড়ে। স্টাফ কোয়ার্টারগুলোর নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। গতরাতে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালু রাখা হয়।

রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের পরিদর্শক শাহীনুর ইসলাম বলেন, রেলপথ পানিতে তলিয়ে গেছে, ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ময়মনসিংহের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী এলাকার পাওয়ার গ্রিডের কন্ট্রোল রুমে পানি ঢুকে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তিন ঘণ্টায় কন্ট্রোল রুমের পানি সেচে বের করেন। এ ঘটনায় বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।

জেলার আলালপুর এলাকার মৎস্য খামারী মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, অধিকাংশ পুকুর ডুবে সব মাছ ভেসে গেছে। আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

জেলার তারাকান্দা উপজেলার এলাকার সাগর তালুকদার বলেন, জমির ধান তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরেও পানি উঠেছে।

চরঈশ্বদিয়ার কুদরত আলী বলেন, এমন বৃষ্টি দেখছি বহুবার কিন্তু এভাবে পানি জমতে দেখিনি কখনো। ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফিসারি তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতিউজ্জামান বলেন, জেলার সব উপজেলায় ধানখেত তলিয়ে গেছে। তবে তলিয়ে যাওয়ার পরিমাণ এখনও হিসাব করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, নগরীতে শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমায় পানিও কমতে শুরু করেছে। পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে কয়েকটি টিম কাজ করছে। আশা করছি দ্রæত এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত রাতের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষিরা। ১৩ উপজেলায় প্রচুর ফিসারি তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া প্রতি উপজেলায় অনেক ধানখেত তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। হিসাব সংগ্রহ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।