ঢাকা,  সোমবার  ২৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বঙ্গমাতা আবাসন প্রকল্প

পাহাড়ের চূড়ায় এ যেন এক টুকরো শহর

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২১ আগস্ট ২০২৩

পাহাড়ের চূড়ায় এ যেন এক টুকরো শহর

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব আবাসন প্রকল্প

পাহাড়, নদী, ছড়া, ঝিরি ও সমতল ভূমি মিলে এক অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত জেলা খাগড়াছড়ি। রূপ বৈচিত্রে ভরপুর এ জেলায় রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান। পার্বত্য এ জেলার সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিবছর হাজির হন হাজার হাজার পর্যটক। এসব পর্যটকের জন্য গড়ে উঠেছে নামীদামি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। তবে এসব হোটেলে সময় কাটানো স্থানীয় অনেকের কাছেই যেন স্বপ্ন। এমনকি নিজের একটা ঘরও অনেকের কাছে স্বপ্ন। কারণ, প্রতিবছর পাহাড় ধসে ঘরবাড়ি হারায় খাগড়াছড়ির অনেক পরিবার।

সব হারিয়ে নিঃস্ব এসব মানুষের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব আবাসন প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পে ঠাঁই মিলবে ৬০ পরিবারের। শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, এ প্রকল্পে বসবাসকারীরা পাবেন আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। প্রকল্পের সব কাজ শেষ, এখন অপেক্ষা সুবিধাভোগীদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার। এ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত ১৫ ভবনে বসবাস করবে ৬০ পরিবার।

পাহাড়ের ওপর নির্মিত এসব ভবনে রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা। কাছে গিয়ে দেখলে মনে হবে কোনো একটি রিসোর্ট যেন খুবই গুছিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব আবাসন প্রকল্প’। এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ১৫টি ভবন। দুই তলাবিশিষ্ট প্রতি ভবনে থাকতে পারবে ৪টি করে পরিবার। সবমিলিয়ে ৬০টি অসহায় পরিবার থাকতে পারবে এই আবাসন প্রকল্পে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ভবনগুলোতে প্রতি পরিবারের জন্য রয়েছে দুইটি বেড রুম, একটি ডাইনিং রুম, রান্নাঘর ও টয়লেট। পাহাড়ের ওপর নির্মিত এসব ভবনে রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা। কাছে গিয়ে দেখলে মনে হবে কোনো একটি রিসোর্ট যেন খুবই গুছিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির অনেক স্থাপনাই নির্মাণ করা হয়েছে পাহাড়ে কিংবা পাহাড় ঘেঁষে। স্থানীয়দের বসতবাড়িও সমতল এলাকার মতো নয়। কোথাও গুচ্ছ আকারে, আবার কোথাও ছড়ানো ছিটানো। ফলে সবার জন্য একইভাবে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাও দুষ্কর। তবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারীরা এক ছাদের নিচে পাবেন আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে এ আবাসন প্রকল্প। জেলা শহর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের সড়ক ধরে এগোলেই চোখে পড়বে শালবন ঘেরা সড়ক। শালবনের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা পাকা সড়ক, কোথাও পাহাড়ের পাদদেশে আবার কোথাও পাহাড়ের ঢাল বেয়ে এগিয়ে গেছে এই সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই পৌঁছে যাবেন বঙ্গমাতা আবাসন প্রকল্পে।

প্রকল্পটি শহর সংলগ্ন হওয়ায় এখানে বসবাসকারীরা চাইলেই সহজেই নানা কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারবেন। এতে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান সড়ক সংলগ্ন ছোট পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রশস্ত একটি সড়ক প্রায় শত ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে গেছে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই দেখা মিলবে দৃষ্টিনন্দন আবাসন প্রকল্পটির। সেখান থেকে ছোট ছোট সড়ক পৌঁছেছে প্রতিটি ভবনের প্রধান ফটকে। সব ভবনই দোতলা বিশিষ্ট। লাল-সবুজ রঙে মোড়া ভবনগুলোর সামনে ও পেছনে রোপণ করা হয়েছে নানা ধরনের গাছ। এছাড়া ভবনের ছাদ থেকে উপভোগ করা যায় চারদিকের অপার সৌন্দর্যে মোড়া পাহাড়। প্রকল্পটির সামনে দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায়, উঁচু-নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। তার মধ্যে কোথাও কোথাও দুই-চারটি করে বাড়ি। পাহাড়ে পাখির কলতান আর নির্মল বাতাস ছুঁয়ে যাবে যে কারও হৃদয়। উপকারভোগীদের এখনো ভবনগুলো বুঝিয়ে না দেওয়ায় প্রকল্প এলাকায় বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। তবে উপকারভোগীরা বসবাস শুরু করলে এক ব্যস্ত নগরীর মতোই হয়ে উঠবে আবাসন প্রকল্পটি। পাহাড়ের বুক চিরে এ যেন একখণ্ড আধুনিক শহর।

প্রকল্পটি শহর সংলগ্ন হওয়ায় এখানে বসবাসকারীরা চাইলেই সহজেই নানা কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারবেন। এতে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। এই আবাসন প্রকল্পে থাকা পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েদের জন্য রাখা হয়েছে শিক্ষার ব্যবস্থা। শুধু আবাসন প্রকল্পেই নয়, পাশাপাশি সহজেই শহরের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষালাভ করতে পারবে এখানকার ছেলেমেয়েরা।

পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা যান খাগড়াছড়িতে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। যেখানে থেকে প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে মানসিক প্রশান্তি খোঁজেন ভ্রমণ পিপাসুরা। অথচ পাহাড়ি জেলায় থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখার সুযোগ হয় না জেলার ভূমিহীন, সহায়-সম্বলহীন মানুষের। তাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি নতুন এক স্বপ্ন পূরণে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনগুলো। হতদরিদ্র, অনাথ ও ভূমিহীন এসব পরিবার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আবাসনে বসবাস করবেন, এটা তারা কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি।

এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নতুন এই আবাসন প্রকল্পের সব কাজ। বরাদ্দের জন্য পরিবারগুলোর তালিকাও করা হয়েছে।

ফ্ল্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিহীন ও অনাথদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৬০টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগির এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। 

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, সাত একর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব আবাসন প্রকল্প’। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় খাগড়াছড়ির অনেক জায়গায় বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। এজন্য এখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। লোডশেডিংয়ে যাতে এখানকার উপকারভোগীদের কষ্ট না হয়, সেজন্য সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মোটকথা আধুনিক জীবনযাপনের সব সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে এখানে।

তিনি বলেন, ফ্ল্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিহীন ও অনাথদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৬০টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগির এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এরপর ৬০ পরিবারের কাছে ফ্ল্যাটের চাবি ও মালিকানা হস্তান্তর করা হবে। আশা করছি ভূমিহীন, ভাসমান পরিবারগুলো এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাতে পারবে।