ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বারি সরিষা-১৮ ও বারি সূর্যমুখী-৩ এর উৎপাদন কার্যক্রমের মাঠ দিবস

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ২ মার্চ ২০২১

বারি সরিষা-১৮ ও বারি সূর্যমুখী-৩ এর উৎপাদন কার্যক্রমের মাঠ দিবস

বাংলাদেশে তৈলবীজ ও ডাল ফসলের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (সগবি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), ফরিদপুর ও তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুর আয়োজনে মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের উজানমল্লিকপুর গ্রামে বারি উদ্ভাবিত তৈল ফসল বারি সূর্যমুখী-৩ ও বারি সরিষা-১৮ এর উৎপাদন কার্যক্রমের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুরের সম্মানিত পরিচালক ড. রীনা রানী সাহা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি, গাজীপুরের পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন উইং এর পরিচালক ড. মো. কামরুল হাসান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, বারি, গাজীপুর এর প্রকল্প পরিচালক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল লতিফ আকন্দ, আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র, মাদারীপুর এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ছালেহ উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফরিদপুর এর উপ-পরিচালক ড. মো. হজরত আলী, বিএডিসি’র যুগ্ম পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন এবং মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র ফরিদপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলাউদ্দিন খান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ড. সেলিম আহম্মেদ। তিনি আগত সম্মানিত অতিথিদের মাঠ দিবসে অংশগ্রহনের জন্য ধন্যবাদ জানান। মাঠ দিবসে সংশ্লিষ্ট গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আগত শতাধিক চাষী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সগবি, বারি, ফরিদপুরের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বৈজ্ঞানিক সহকারীবৃন্দ এবং স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সগবি, ফরিদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.এফ.এম. রুহুল কুদ্দুস।

মাঠ দিবসে বারি সরিষা-১৮ জাত ও বারি সূর্যমুখী-৩ সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয় যা থেকে প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন তেল পাওয়া যায়। এদেশের কৃষকরা সাধারণত স্থানীয় জাতের সরিষার আবাদ করে থাকে যার হেক্টর প্রতি গড় ফলন মাত্র ৮৫০ কেজি বা প্রতি শতাংশে ৩.৫ কেজি। যেসব কৃষকেরা দীর্ঘমেয়াদী (১০০-১২০ দিন) সরিষার জাত ব্যবহার করতে চান, তারা ঝাঁঝমুক্ত বারি সরিষা-১৮ (ক্যানোলা জাত) ব্যবহার করতে পারেন যা রান্নার তেল হিসেবে ব্যবহার হয়। বারি সরিষা-১৮ জাতের তেলে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ১.০৬% যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশে চাষকৃত অন্যান্য উন্নত সরিষার জাতে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ৪০%-৪৫%। পরিমাণ মত সার ও সেচ প্রয়োগে এ জাত ২.০-২.৫ টন/হেক্টর (৮-১০ কেজি/শতাংশ) পর্যন্ত ফলন দেয়। বারি সরিষা-১৪ চেয়ে বারি সরিষা-১৮ শতাংশে প্রায় ২ থেকে ৬ কেজি বেশী ফলন দিয়ে থাকে।

সূর্যমূখী আবাদ ফরিদপুরে একেবারেই নতুনভাবে শুরু হয়েছে। তৈল ফসল থেকে উৎপাদিত তেল আমাদের চাহিদার মাত্র এক তৃতীয়াংশ পূরণ করে। সূর্যমুখীতে ৪০-৪৫% লিনোলিক এসিড আছে এবং তেলে ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড নাই। বারি সূর্যমুখী-৩ জাতটি খাটো জাতের। এরই ধারাবাহিকতায় বারি উদ্ভাবিত আধুনিক জাত ও কলাকৌশল দ্বারা উজানমল্লিকপুর এলাকায় বারি সূর্যমুখী-৩ মোট ৫ বিঘা জমিতে ও নরসিংহদিয়া এলাকায় বারি সরিষা-৮ মোট ১২ বিঘা জমিতে আবাদ করা হয়েছে। এছাড়াও অন্য এলাকায় বারি সূর্যমুখী-৩ মোট ৮ বিঘা আবাদ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আগত কৃষক কিষাণীরা বারি সূর্যমুখী-৩ এর উৎপাদন প্লট পরিদর্শণ করেন এবং জাতের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কৃষকেরা গাছের অবস্থা দেখে খুবই আনন্দিত এবং এ ফসল ফলাতে কৃষকের উৎপাদন খরচ খুবই কম হয়েছে। তাই কৃষকেরা অধিক ফলন পাওয়ার আশা করছে। কৃষকেরা খুব সহজে তাদের প্রচলিত ফসল ধারায় সরিষা ও সূর্যমুখী ফসল খাপ খাওয়াতে পারে অর্থাৎ পরের ফসল পাট/তিল আবাদ করতে পারে। তারা আধুনিক জাতের উচ্চ ফলনশীল বীজ প্রাপ্তিতে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণকর্মীদের অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে পরিবর্তনশীল জলবায়ু মোকাবেলায় উপযোগী জাত ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি  গুরুত্ব আরোপ করেন ও উল্লিখিত আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আবাদের জন্য কৃষকের প্রতি আহবান করেন। সভাপতি মহোদয় আগত অতিথি, কৃষক ও অন্যান্য কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন