ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যার দূষণে বিভিন্ন স্থানে ভেসে উঠছে নদীর মাছ

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ১২ এপ্রিল ২০২১

কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যার দূষণে বিভিন্ন স্থানে ভেসে উঠছে নদীর মাছ

শান্ত ও স্বচ্ছ জলের শীতলক্ষ্যার সেই রূপ আর নেই। গত কয়েক বছরে দূষণে সে তার স্বকিয়তা হারিয়েছে। এখন হারানোর পথে তার বুকে নিরাপদে বসতি স্থাপন করা জলজ প্রাণীগুলো। গত কয়েকদিন ধরে শীতলক্ষ্যার বুকে ভেসে উঠছে মাছসহ জলজপ্রাণী। এ খবরে স্থানীয়দের মধ্যে মৎস্য আহরণের যেন উৎসব শুরু হয়েছে।

গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেলেও স্থানীয়দের মধ্যে দেশীয় মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের এ চিত্রে হতাশাও তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি, গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী শীতলক্ষ্যাকে শিল্পকারখানার দূষণ থেকে বাঁচাতে জরুরিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও বানার নদী থেকে গাজীপুরে শীতলক্ষ্যার উৎপত্তি। জেলার শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে এই নদী। আবহমান কাল থেকে শীতলক্ষ্যা গাজীপুরের অন্যতম প্রাণের স্পন্দন। এ নদী ঘিরেই এলাকার কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য ও গ্রামীণ অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে।

দেশীয় মাছের অন্যতম ভাণ্ডার ছিল এই শীতলক্ষ্যা নদী। বেশ কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার শিল্পকারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্য ক্ষিরু ও মাটিকাটা নদীর মাধ্যমে বানার ও শীতলক্ষ্যা দূষিত হচ্ছে। স্বচ্ছ জলের পরিবর্তে কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সয়লাব হয়ে পড়েছে এই নদী।

গাজীপুর জেলা মৎস্য অফিসের দেয়া তথ্য মতে, দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎস ছিল এই নদী। এই নদীকে ঘিরে প্রায় এক হাজার জেলে পরিবার জীবিকা চালাত। সরকারি হিসাবে এই নদীর গাজীপুর অংশ থেকে প্রতিবছর ৫০০ মেট্রিক টন মাছের সরবরাহ পাওয়া যেত।

বরমী খেয়াঘাটের মাঝি পরশ বলেন, গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও গত রোববার রাত থেকে বরমী ও কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নদীর মাছ ভেসে উঠছে। এ খবরে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ নদী থেকে ভেসে ওঠা মাছ সংগ্রহ করছেন।

স্থানীয় জেলে হরিপদ দাস বলেন, এই নদীর মাছের ওপর ভরসা করে বংশানুক্রমিকভাবে মাছ ধরে জীবিকা চালাচ্ছি। তবে শিল্প বর্জ্যের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই মাছের উৎপাদন কমেছে। এখন আর নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না। প্রতি বছরের এই সময়ে মাছ মরে ভেসে ওঠে। এভাবে মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ছে শীতলক্ষ্যা। যে নদীকে কেন্দ্র করে আমরা বেঁচে রয়েছি চোখের সামনেই সেই নদীর মৃত্যু দেখতে হচ্ছে আমাদের।

নদীতে মাছ ধরছিল কাপাসিয়ার হাড়িয়াদি গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী তারিফুল ইসলাম। তার ভাষ্য, গত রাত থেকে মাছ যেন আর নদীতে থাকতে পারছিল না। নদীর তীরে লাফিয়ে ডাঙ্গায় উঠছিল মাছগুলো।

সে জানায়, চিংড়ি, বাইমসহ নানা ধরনের মাছ গত রাত থেকে আমরা সংগ্রহ করছি। এভাবে মাছ ধরতে পারায় খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে শংকাও রয়েছে এভাবে যদি সব মাছ একসাথে চলে যায় তাহলে আমরা কি ভবিষ্যতে মাছ পাব?

হঠাৎ করে শীতলক্ষ্যা নদীতে মাছ ভেসে ওঠার বিষয়ে নদী গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, এ সময়টাতে নদীতে পানি কমে যায়, সাথে শিল্প কারখানার বর্জ্য দুটি একসাথে নদীকে বিষাক্ত করে তুলেছে। নদীর পানিতে অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়ে মাছসহ জলচর প্রাণিগুলো বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ হারিয়েছে। ইতোমধ্যে দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা নদীতে জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন ঘোষণা না হলেও শীতলক্ষ্যাও একই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

তিনি বলেন, মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই জরুরিভাবে নদী ও এর জীববৈচিত্র রক্ষা করতে হবে। এজন্য শিল্প কারখানার দূষণ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।

গাজীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, শিল্পকারখানার দূষণে বর্তমানে শীতলক্ষ্যা নদীটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পবর্জ্য এর জন্য দায়ী। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাছের দুর্দশা দেখেছি। এভাবে চলতে থাকলে শীতলক্ষ্যায় ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে থাকা দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

গাজীপুর কথা