ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ইট ভাটা বন্ধ হওয়ায় সবুজের সমারোহ বিরাজ করছে গাজীপুর সিটিতে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১২ জানুয়ারি ২০২১

ইট ভাটা বন্ধ হওয়ায় সবুজের সমারোহ বিরাজ করছে গাজীপুর সিটিতে

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৭৪টি ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হতো এলাকাবাসীর। আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গাছপালায় কোনো ফসল হত না। সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা প্রকার চর্মরোগে ভুগছিল। বিলে পাওয়া যেত না মাছ। মোট কথা জীববৈচিত্র প্রায় হারাতে বসেছিল। কিন্তু দুই বছর ধরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সকল ইট ভাটা বন্ধ করে দেয়ায় এলাকাবাসীর মনে এখন স্বস্তি ফিরেছে।

এ সকল ইট ভাটা বন্ধ থাকার কারণে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় এখন সবুজের সমারোহ বিরাজ করছে। কৃষকের ঘরে উঠছে নতুন ধান, নানা প্রকার শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতর ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০-২৫ বছর আগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে শত শত ইট ভাটা। সরকারি অনুমোদন নিয়ে কিংবা অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন উপায়ে ভাটা মালিকরা ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছিলেন।

এরই মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলার একাংশ ও টঙ্গী থানা নিয়ে গঠিত হয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। পরে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুসারে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ইট ভাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত ইটভাটার সকল স্থাপনা সরিয়ে নিতে ইটভাটা মালিকদের চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু ভাটা মালিকরা ইটভাটার স্থাপনা সরিয়ে না নিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ও অবৈধভাবে গত ৭ বছর ধরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কড্ডা, বাইমাইল, বাঘিয়া, কাতলাখালী, রাজাবাড়ী, আহাকী, আমবাগ, জয়েরটেক, ইসলামপুর, গাছা, কারখানাবাজার, কাউলতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ১৭৪টি ইটভাটা পরিচালনা করে আসছিলেন।

পরে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। সে অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতর সদর দফতরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ইট ভাটাবিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু করে গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতর।

২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ইট ভাটার ওপর ২৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ১১২টি অবৈধ ইট ভাটার আগুন ফায়ার সার্ভিস দিয়ে নিভিয়ে দেন এবং ভেকু দিয়ে ওইসব ইট ভাটার কিলন ভেঙে গুড়িয়ে দেন। এ সময় ওইসব ইট ভাটা মালিককে ৪ কোটি ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া জরিমানা অনাদায়ে ৩টি অবৈধ ইট ভাটা মালিককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কারণে এ বছর (২০২০-২০২১ অর্থ বছর) গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৭৪টি ইট ভাটার মধ্যে সকল ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ওইসব এলাকায় এখন পুরোদমে চাষাবাদ শুরু করেছেন এলাকাবাসী।

বর্ষার পরপরই অনেক ইট ভাটার স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে সেখানে সরিষা, ধান ও বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছেন জমি মালিকরা। এতে ওইসব এলাকায় প্রায় ২০-২৫ বছর আগের পরিবেশ ফিরে এসেছে। সবুজে ভরে গেছে পুরো এলাকা। ইটভাটার কালো ধোয়া ও ধুলাবালি থেকে দূষণমুক্ত হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউলতিয়া কারখানা বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, গত ১৫-২০ বছর আগে এ এলাকায় প্রচুর শাক-সবজি ও ফসল আবাদ হত। ইট ভাটার কারণে সকল কৃষি আবাদ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এলাকায় ধুলাবালি ও ইটভাটার কালো ধোয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ে। এতে মানুষের শ্বাস প্রশ্বাস নিতেও সমস্যা হত। দুষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হত এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সিটি কর্পোরেশনের সকল ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হয়েছে। গত ১৫-২০ বছর আগে এসব এলাকায় যেমন পরিবেশ ছিল তা আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে।

বাসন হক মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল রশিদ জানান, আগে ঘরের ভেতর, ছাদের ওপর ও উঠানে ইট ভাটার কালো ছাই পড়ে থাকত। গাছে ও জমিতে ফসল হত না। এবার আর এসব নেই। দূষণমুক্ত সুন্দর একটি পরিবেশ গড়ে দেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দূষণমুক্ত পরিবেশে আমরা বেঁচে থাকতে চাই।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সালাম সরকার জানান, পরিবেশ অধিদফতর সদর দফতরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখা ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ ইট ভাটাবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। পরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৬৬টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এর ফলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৭৪টি ইটভাটার মধ্যে এ বছর সবকটি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ইট ভাটামুক্ত থাকায় এলাকাবাসী ইটভাটার দূষণ থেকে মুক্তি পেল। এতে পরিবেশ ভালো থাকবে এবং এখানে পরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি দূষণমুক্ত, আধুনিক, পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য শহর করতে কাজ করে যাচ্ছি। নগরকে বাসযোগ্য করতে নাগরিকদের সমস্যা হয় এমন কিছু নগরে হতে দেয়া হবে না। উন্নয়নের পাশাপাশি আমরা পরিবেশের দিকেও নজর রাখছি। গাজীপুর মহানগরীতে পরিবেশ বিনষ্ট করে কেউ কোনো কিছু করতে পারবে না।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন