ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গৃহনকশায় ইসলামী ভাবধারা

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ১০ মে ২০২২

গৃহনকশায় ইসলামী ভাবধারা

মানবজাতির পার্থিব জীবন শুধুই পরকালের প্রস্তুতির জন্য। অনুকূল পরিবেশ পেলে প্রস্তুতি নেওয়াটা সহজ হয়। মানবজীবনের মৌলিক এবং অধিকাংশ সময় নিজ গৃহে অতিবাহিত হয়। গৃহের অবকাঠামোতে ইসলামী ভাবধারার ছোঁয়া থাকলে পরকালীন জীবনের প্রস্তুতির অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।

নামাজ কক্ষ : গৃহনকশায় একটি আলাদা নামাজ কক্ষ রাখা দরকার। এতে বাড়িতে নামাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে। ফরজ নামাজগুলো মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা জরুরি হলেও তাহাজ্জুদসহ অন্য সুন্নত ও নফল নামাজগুলো ঘরে আদায় করা উত্তম। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের কিছু নামাজ (সুন্নত ও নফল) তোমাদের ঘরে আদায় করবে। তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না। ’ (বুখারি, হাদিস : ১১৩১, মুসলিম, হাদিস : ১৮৫৬)

আর নারীদের জন্য সব নামাজই গৃহের অভ্যন্তরে আদায় করা উত্তম। গৃহই তাদের সর্বোত্তম মসজিদ। উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ হলো তাদের ঘরের একান্ত স্থান। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬৫৮৪)

অজুখানা :  বাড়িতে অজুর একটি আলাদা জায়গা থাকলে খুব ভালো হয়। কারণ বাথরুমে অজু করলে দুটি সমস্যা দেখা দেয়। এক. অজুর আগে, পরে ও মাঝে আল্লাহর নামসংবলিত দোয়া রয়েছে। বাথরুমে আল্লাহর নাম নেওয়া যায় না। ফলে দোয়া পড়া যায় না অথবা বিলম্বে পড়তে হয়। দুই. বাথরুমে নাপাকির ছিটে-ফোঁটা পড়ে থাকতে পারে। অজুর পানির মাধ্যমে তা ছড়িয়ে যেতে পারে। অজুর জন্য ভিন্ন  জায়গা থাকলে এসব থেকে নিরাপদ থাকা যায়।  

অতিথি কক্ষ : আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশিসহ অপরিচিতজনও বাড়ির অতিথি হয়। অতিথির অপ্যায়ন ঈমানের অন্যতম দাবি। সে জন্য বাড়িতে অতিথির জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ থাকা খুবই সমীচীন। সেটি যুক্ত হতে পারে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি শয্যা পুরুষের, দ্বিতীয় শয্যা তার স্ত্রীর, তৃতীয়টি অতিথির, আর চতুর্থটি (যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়) শয়তানের। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৭৩)

বাড়ি প্রশস্ত হওয়া : বাড়ি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্বারা সমৃদ্ধ এবং পাপের উপকরণমুক্ত হওয়া উচিত। তাহলে অবসর সময় বাড়িতে পাপমুক্ত অবস্থায় কাটানো যাবে। উকবাহ ইবন আমের (রা.) বলেন, আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, কিসে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব? তিনি বলেন, ‘তুমি নিজ জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো। তোমার ঘর তোমার জন্য প্রশস্থ হোক। (অবসর সময়ে নিজ গৃহে অবস্থান করো) আর নিজ পাপের জন্য ক্রন্দন করো। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪০৬)

নারীবান্ধব গৃহ নির্মাণ : কোরআনে নারীদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের আদেশ করা হয়েছে এবং গৃহকে নারীর দিকেই সম্বন্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান করবে এবং জাহেলি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)

এ জন্য গৃহকে নারীদের জন্য পর্দা রক্ষার উপযোগী ও নিরাপদ করে গড়ে নির্মাণ করতে হবে। নারীদের গমনাগমনের স্থানগুলো যেমন রান্নাঘর, খাবার পরিবেশনের জায়গা ইত্যাদি অতিথি কক্ষ থেকে আড়াল করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। গৃহনকশায় এগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রতিযোগিতা করে বাড়ি নয় : ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হয় একান্তই প্রয়োজন পূরণের জন্য, বিলাসিতা বা প্রদর্শনের জন্য নয়। কাজেই গৃহ নির্মাণে প্রতিযোগিতা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অপচয় ও অপব্যয় পরিহার করে নিজ সামর্থ্য ও প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ির নকশা হওয়া চাই। এ ক্ষেত্রে অন্যের সঙ্গে তাল মেলানোর সুযোগ নেই। এগুলো কিয়ামতের আলামত। ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে বলেন, ‘আর তুমি দেখবে যে খালি পা ও খালি গায়ের অধিকারী মুখাপেক্ষী রাখাল শ্রেণির লোকেরা উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরি করে গর্ব প্রকাশ করবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১০২)

ঋণ করে বাড়ি নয় : ঋণ একটা বোঝা। ঋণগ্রস্ততা দুনিয়াতে অনেক সময় দুশ্চিন্তা, অশান্তি ও অনৈতিকতা এবং আখিরাতে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়। ঋণ নিয়ে যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারলে অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। কথা দিয়ে কথা ঠিক রাখা যায় না। ফলে মুনাফিকের আলামতগুলো নিজের মধ্যে প্রকাশ পেতে থাকে। আর সুদের ভিত্তিতে ঋণ নিলে দীর্ঘ মেয়াদে সুদি কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে হয়। মহান আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। এ জন্য সবারই ঋণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত। ঋণমুক্ত থাকাই জান্নাতে প্রবেশে সহায়ক। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার রুহ এবং শরীর তিন জিনিস থেকে মুক্ত অবস্থায় পৃথক হয় অর্থাৎ মৃতবরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিন জিনিস হলো অহংকার, সম্পদ আত্মসাৎ ও ঋণ। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৫৭৩)

পরিশেষে বলা যায়, বেঁচে থাকার জন্য প্রায় সবাই গৃহ নির্মাণ করে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন ও সাধ্যমাফিক গৃহ নির্মাণ করলে এবং গৃহনকশায় ইসলামী ভাবধারার ছোঁয়া থাকলে তা সর্বদাই কল্যাণকর হবে, ইনশাআল্লাহ।  

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

গাজীপুর কথা