ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কালীগঞ্জে খেলার মাঠে অবৈধ মেলা

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ১০ মে ২০২২

কালীগঞ্জে খেলার মাঠে অবৈধ মেলা

বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সীমানার চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে স্টল। মূল ফটক দিয়ে ভেতরে গেলে চোখে পড়ে টাওয়ার, কৃত্রিমভাবে তৈরি পানির ফোয়ারা ও ছোট চারটি ঘর। ১১ মে থেকে এখানে শুরু হবে শিল্পপণ্য মেলা। প্রস্তুতির সময় থেকেই বন্ধ আছে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের খেলাধুলা।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মেলাটি চলবে মাসব্যাপী। মেলাটি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ তাঁত শিল্প শিক্ষা ফাউন্ডেশন, আর আয়োজনে আছে গাজীপুর জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। আইন ভঙ্গ করে খেলার মাঠে মেলা বসানো নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

আইন অনুযায়ী খেলার মাঠে খেলা ছাড়া অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া বা ইজারা দেওয়া অপরাধ। এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এ আইন লঙ্ঘনে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড কিংবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় সাজার বিধান রয়েছে।

গতকাল সোমবার সকালে দেখা যায়, ফটকে একটি ব্যানারে লেখা—‘পুনাক (পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি) শিল্পপণ্য মেলা-২০২২।’ তবে গাজীপুর পুনাকের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নন্দিতা মালাকার দাবি করেন এ ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি ওয়াকিবহাল নন। কালীগঞ্জ থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, তিনিও এ ব্যাপারে কিছু জানেন না।

বিদ্যালয়ের মাঠটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদন করে তাঁত শিল্প শিক্ষা ফাউন্ডেশন। আবেদনে বলা হয়েছে, গাজীপুর পুনাকের আয়োজনে ও বাংলাদেশ তাঁত শিল্প শিক্ষা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় মাসব্যাপী মেলাটি আয়োজনের জন্য মাঠ চেয়ে আবেদন করা হচ্ছে। ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষক মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কে এম নুরুল ইসলাম আল-মোশারফ ইবনে কাদির বলেন, মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার তিনি কেউ নন। তাই আবেদনটি ইউএনওর কাছে পাঠাতে বলেছেন। এরপর এখানে কীভাবে মেলার কার্যক্রম চলছে তা তিনি জানেন না।

কালীগঞ্জের ইউএনও আসসাদিকুজ্জামান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকেও কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, মেলার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সম্মতি আছে। তিনি হয়তো চাপে পড়ে অস্বীকার করেছেন। এ ছাড়া, পুলিশের প্রতিবেদন ও পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনা করে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে গেলে দেখা যায়, প্রায় পুরো মাঠেই বিছানো হয়েছে ইট। যত্রতত্র পড়ে আছে কাঠ, বালুসহ নানা নির্মাণসামগ্রী। বিভিন্ন জায়গায় পোঁতা হয়েছে বাঁশ। নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কয়েকজন জানান চারপাশ মিলিয়ে দোকান ঘর হবে প্রায় ৫০টি। থাকবে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।

মাঠটিতে নিয়মিত খেলতে আসে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার শিশু-কিশোর, বাজারের ব্যবসায়ী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা। মেলা উঠে গেলেও মাঠটি কতটা ব্যবহার উপযোগী থাকবে তা নিয়েও সংশয় আছে তাঁদের মধ্যে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, কিছু অসাধু চক্র প্রতিনিয়তই টাকা আয়ের উৎস হিসেবে মাঠগুলো ব্যবহার করছে। তাদের মদদ দিচ্ছে প্রশাসনের লোকজন। খেলার মাঠে মেলা—এটা পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ প্রশাসনের লোকজনই সেই আইন ভঙ্গ করে মেলার আয়োজন করছেন।

গাজীপুর কথা