ঢাকা,  রোববার  ১৯ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

করোনায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী পাবেন প্রণোদনা

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ১৯ জুন ২০২০

করোনায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী পাবেন প্রণোদনা

করোনার ছোবলে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়া সকল বেসরকারী নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীকে এককালীন আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তার অধীন দফতরগুলোর সহায়তায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) দেয়া তথ্য অনুসারে তালিকায় শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা কম বেশি হতে পারে এমন চিন্তা থেকে মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে তালিকা যাচাই-বাছাই করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগ। তবে কতজন শিক্ষক-কর্মচারী আর্থিক সুবিধার আওতায় আসছেন তা এখনও চূড়ান্ত না হলেও এ সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে উদ্যোগ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিতে চায় না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তাদের উদ্যোগের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বলেছেন, ‘আমরা কাজ গুছিয়ে রাখছি। শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রণোদনা দিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে নন-এমপিও শিক্ষকদের তালিকাও চাওয়া হয়েছে। সবই সত্যি। কিন্তু এ নিয়ে এখনও কথা বলার সময় হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি হলেই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে। অনেক টাকার বিষয়। তাই সরকারকেও অনেক কিছু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’।

তালিকা প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত আছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোঃ গোলাম ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘হ্যাঁ সরকার সকল নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীকে এককালীন প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের জেলা শিক্ষা অফিসারদের নিয়ে কাজ করছে বলে জানি’।

অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের যথাযথ অনুমোদন পাওয়া সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী নন তারা পাবেন এ সুবিধা। যার পরিমাণ তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা হতে পারে। সব মিলিয়ে এক শ’ ১০ কোটি টাকারও বেশি প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) দেয়া তথ্য অনুসারে একটি তালিকা করা হয়েছে। ব্যানবেইসের দেয়া তখ্য হালনাগাদ না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা কম বেশি হতে পারে এমন চিন্তা থেকে মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ।

ব্যানবেইসের তথ্য অনুসারে শিক্ষক-কর্মচারী ছিলেন এক লাখ ৮৫ হাজারেরও বেশি। যাচাই-বাছাই করলে সংখ্যা আরও কমবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বহু প্রতিষ্ঠান কোন মতে স্বীকৃতি নিয়ে চললেও আর্থিক ও শিক্ষার্থী সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও অন্যত্র চলে যান। ফলে স্বীকৃতির সময় যে জনবল যেখানে হয় পরবর্তীতে তারা অনেকেই থাকেন না।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান থেকেই নামমাত্র সম্মানী পান। আবার কেউ কিছুই পান না। তারা মূলত টিউশনি, বই লেখা ইত্যাদি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু চলমান লকডাউনে আয়ের সেসব রাস্তা বন্ধ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। গত বছর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে এখন সেই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিচ্ছে সরকার। বেতন ভাতা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এমপিওর দিন থেকেই সরকারী সুবিধা তারা পাচ্ছেন।

কিন্তু যেহেতু অধিকাংশ আবেদনকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করা যায়নি সেহেতু সেখানকার শিক্ষক-কর্মচারীরা এই করোনার মধ্যে পড়েছেন মহাসঙ্কটে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও তারা কোন টাকা পাচ্ছেন না। এসব সমস্যার কথা চিন্তা করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, যে টাকা দেয়া হবে তার পরিমাণ হয়ত বেশি হবে না। তবে কিছুটা পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগ।

মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৮০ হাজার। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদেরও প্রণোদনার আওতায় আনার চিন্তা করছে মন্ত্রণালয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নতুন এমপিও পেয়েছে দুই হাজার ৭৩৭টি। এছাড়া একাডেমিক স্বীকৃতির বাইরে রয়েছে আর দুই হাজারেরও বেশি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

তালিকা প্রস্তুতের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকদের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও দেয়া হয়েছে চিঠি। চিঠির সঙ্গে ছক দেয়া হয়েছে। ছকে বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর (যার যেটা আছে) চাওয়া হয়েছে। এ্যাকাউন্ট নম্বরে ব্যবহার করা নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সঙ্গে মিল থাকতে হবে।

চিঠির সঙ্গে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি তালিকাও ডিসিদের পাঠানো হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। স্থানীয় জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা যাচাই করে ইমেলে পাঠাতে হচ্ছে ডিসিদের। এই চিঠি পাওয়ার পর দেশের সকল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে এসএমএস করেছেন অথবা ফোনে বলেছেন মেল চেক করতে। ছক অনুযায়ী তালিকা হালনাগাদ ও যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা পাঠাতে বলা হয়।

তালিকায় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী, সহকারী গ্রন্থাগারিক, খন্ডকালীন, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী, ডিগ্রীর তৃতীয় শিক্ষকসহ সব ধরনের শিক্ষকের নাম রয়েছে। যারা ব্যানবেইসের ইআইআইএনভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোন পদে কর্মরত এবং তালিকাভুক্ত এবং এমপিওর সুবিধা পান না তারাই এই নতুন তালিকায় স্থান পাবেন। তালিকাটি হালনাগাদ হয়েছে এবং সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিকাশ, রকেট, নগদের এ্যাকাউন্ট থাকলে সেই নম্বর। কঠোরভাবে দেখা হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সঙ্গে তালিকা ও বিকাশের নামের মিল রয়েছে কিনা।

গাজীপুর কথা