ঢাকা,  মঙ্গলবার  ১৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ফেসবুকে মেয়ে সেজে আড়াই বছর ধরে প্রেম করে প্রতারণা, আটক ১

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৩১ আগস্ট ২০২১

ফেসবুকে মেয়ে সেজে আড়াই বছর ধরে প্রেম করে প্রতারণা, আটক ১

মেয়ে সেজে ফেসবুকে আড়াই বছর প্রেম করে বিয়ে করার কথা বলে প্রেমিক নিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা খেয়েছে ভুয়া প্রেমিকা। এই প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময়ে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনার বেতাগী উপজেলার পৌর এলাকায়। প্রতারককে বরগুনা জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকার লালবাগের মো: সুমন মিয়া (৩০) ফেসবুকে জারা খান নামে দিয়ে ফেইক আইডি খোলে। আইডির প্রোফাইলে ব্যবহার করা হয় সুন্দরী মেয়ের ছবি। বায়োগ্রাফিতে নিজেকে মডেল হিসাবে উল্লেখ করে। এই আইডির মাধ্যমে পরিচয় হয় বরগুনা জেলার বেতাগী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত রাধিকা জীবন রায়ের পুত্র টুটুল রায়ের সাথে। কিছুদিন চ্যাটিং করার পর জারা খান টুটুলকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সুন্দরী জারা খানের ছবি দেখে তার প্রেমের প্রস্তাব রাজি হয়ে যায় টুটুল রায়। 

জারা খান নামের ওই প্রতারক নিজেকে বৃত্তশালী বাবার কণ্যা বলে পরিচয় দেয়। এরপর শুরু হয় তাদের গভীর ভালবাসার সম্পর্ক। বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে টুটুলের কাছে টাকা চাইতো জারা খান। প্রেমে টুটুল এতটাই আসক্ত ছিল চাওয়ার সাথে সাথে টাকা পাঠিয়ে দিত। এভাবে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সুমন মিয়ার এই চক্র। 

প্রতারক চক্র মাঝে মাঝে ভিডিও কলে সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে কথা বলাতো যেন টুটুলের কোন সন্দেহ না থাকে। এভাবে চলে আড়াই বছরের কঠিন প্রেম। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের ধর্ম। পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার শর্তে টুটুল রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণে সম্মত হয়। 

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেয়া এবং বিয়ে করার জন্য টুটুলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে ২৯ আগস্ট রোববার বেতাগী আসেন জারা খানের আপন ছোটভাই সুমন খান। সুমন আসার পর টুটুল তার বন্ধুদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। সুমন খানের পোশাক এবং কথা-বার্তায় বড়লোক বাবার সন্তান হিসেবে সন্দেহ হলে টুটুলের বন্ধুরা তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এর মধ্যে পরিবারের লোকজনের অমতে সুমন খানের সাথে ঢাকা যাওয়ার জন্য টুটুল বাসা থেকে বের হয়ে যায়। 

এ খবর টুটুলের বন্ধুদের কাছে পৌঁছুলে তারা ঢাকা যাওয়ার বিভিন্ন পথে লোক মোতায়েন করে। উপজেলার সীমান্তবর্তী নিয়ামতি বাসস্ট্যান্ডে সুমন ও টুটুলকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে টুটুলের বন্ধু ও ছাত্রলীগ নেতা রাফি সিকদারের নেতৃত্বে কর্মীরা নিয়ামতি থেকে সুমন ও টুটুলকে নিয়ে আসে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সুমন খান স্বীকার করে জারা খান হিসেবে সে এতদিন ধরে নিজেই টুটুলের সাথে প্রেমের অভিনয় করে আসছিল। 

সুমন খানের সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাশী করে বোরকা, মেয়েদের পোশাক, রূপ চর্চার বিভিন্ন উপকরণ, কৃত্রিম চুল ও নেশা জাতীয় বিভিন্ন ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এসব উপকরণসহ সুমন খানকে বেতাগী থানা পুলিশে দেয়া হয় এবং টুটুল রায়কে অচেতন অবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

টুটুল রায়ের বড়ভাই হরি চন্দ্র রায় বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২২(২) এবং ২৪(২) ধারায় প্রতারক সুমন খানকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৯, তারিখ ৩০ আগস্ট, ২০২১। 
 
প্রতারক সুমন খান স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আড়াই বছর টুটুলের সাথে মেয়ে কন্ঠে কথা বলে বিভিন্ন সময়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছি। এ ধরনের প্রতারণায় সহযোগিতা করে আসছে গ্রুপের মেয়ে সদস্যরাও। আমাদের চক্রের কাজ হলো সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন তরুণ-তরুণীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলা।’

টুটুল রায় জানান, ‘আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করা হয়েছে। আগামীতে আমার মত আর যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য সকলের সচেতন হওয়া দরকার।’

বেতাগী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুস সালাম জানান, সুমন খানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বরগুনায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন