ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কুষ্টিয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, শয্যার ১৩ গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৭ মে ২০২৩

কুষ্টিয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, শয্যার ১৩ গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে

সংগৃহিত ছবি

কুষ্টিয়ায় ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে সব বয়সী রোগী রয়েছেন। গত কয়েকদিনে প্রায় হাজারেরও বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১২ শয্যা বিশিষ্ট ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৬০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যা শয্যার তুলনায় ১৩ গুণ বেশি রোগী রয়েছে।

হাসপাতালে শয্যা-সংকটের কারণে ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা বিছিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। 

রোববার (৭ মে) দুপুরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নার্সরা। আর রোগীর স্বজনরা খাওয়ার স্যালাইন ও ওষুধ নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন নার্সদের টেবিলে। শয্যা ও বারান্দায় জায়গা স্বল্পতার কারণে গাদাগাদি করে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।

এদিকে আক্রান্ত রোগীদের মেঝেতে রাখায় অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ছে। শয্যা সংকটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। রোগীর চাপ থাকায় হাসপাতালের বহির্বিভাগেও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগীর মধ্যে সববয়সী মানুষ রয়েছে। ১২ বেডের এই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৬০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে। এখনো রোগী আসছে। রোগীর তুলনায় শয্যা সংখ্যা খুবই কম। তাই সবাইকে বেডে জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধ ও স্যালাইনের কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত শয্যা ও নার্স না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

রোগীর স্বজন আলম উদ্দিন বলেন, ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বহুগুণ বেশি। আমরা শয্যা পাইনি, আমাদের মতো অনেকেই শয্যা পায়নি। এজন্য বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এভাবে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।

চিকিৎসাধীন রোগী ছুম্মা খাতুন বলেন, গত দুদিন ধরে চিকিৎসাধীন আছি। শয্যা না পেয়ে খুব ভোগান্তি হচ্ছে। ওয়ার্ডের পথে ও মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বেডের ওপর দিয়ে জুতো-স্যান্ডেল পরে চলাফেরা করছে মানুষজন। অনেক সময় আমাদের গায়ের সঙ্গে তাদের পায়ের ধাক্কা লাগে। শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। 

কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেন,  ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ১৬০ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের সেবায় ব্যস্ত সময় পার করছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। 

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, কুষ্টিয়ায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কুষ্টিয়া পৌরসভা ও মিরপুর উপজেলায় তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত প্রতিবছর এ সময় মানুষ বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগীদের গুরুত্বের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য জেলার সব সরকারি হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন রোগীদের সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের তুলনায় শিশুরা বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য শিশুদের ডায়রিয়া দেখা দিলে বেশি বেশি খাওয়ার স্যালাইন, মায়ের বুকের দুধ, নরম সবজির খিচুড়ি খাওয়াতে হবে। তাহলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। এছাড়া ডায়রিয়া সমস্যা এড়াতে বাড়তি সতর্ক হতে হবে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। রোগীর কষ্ট বেশি হলে দেরি না করে হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে।