ঢাকা,  বুধবার  ০৮ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শেরপুরে হাজারও মানুষের ভিড়ে মুখরিত ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা

প্রকাশিত: ১২:৪১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

শেরপুরে হাজারও মানুষের ভিড়ে মুখরিত ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা

শেরপুরে হাজারও মানুষের ভিড়ে মুখরিত ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা

শেরপুরে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের নবীনগর মহল্লার শাওয়াল পীরের মাজারের উল্টোপাশের খালি জমিতে ওই ২ শতাধিক বছরের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী ওই পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নবীনগর পৌষ মেলা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ওই মেলায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর ভিড় জমে।

জানা যায়, এ মেলা মূলত ৩০ পৌষ সংক্রান্তির মেলা হলেও কয়েক বছর ধরে মেলার স্থানে বোরো আবাদের জন্য সংক্রান্তির আগেই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই এ মেলা এখন ‘পৌষ সংক্রান্তি’ মেলা থেকে কেবল ‘পৌষ মেলায়’ রূপ নিয়েছে। মেলায় প্রতি বছর অন্যতম আকর্ষণ ঘোড় দৌড়ের পাশাপাশি গাঙ্গি খেলা ও সাইকেল রেস হলেও এবার র‌্যাফেল ড্র ও মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা ও প্রতিযোগিতা অনুুষ্ঠিত হয়। মেলায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক খাবার, মুড়কি-মুড়ি, মোওয়া, নিমকি, গজা, কলাই, বাদাম কটকটি, তিলের খাজা এবং প্লাস্টিক ও মাটির তৈরি শিশুদের বিভিন্ন খেলনা ও নারীদের বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর পাশাপাশি গৃহস্থালির বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসে। ওই পৌষ মেলায় শেরপুর শহরসহ এর পাশেপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষের ঢল নামে। দোকানীরা বিক্রি ভাল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে মেলাকে ঘিরে শেরপুর শহরের নবীনগরসহ আশেপাশের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নবীনগরের এ পৌষ মেলা কত বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে না পারলেও স্থানীয়রা জানান, প্রায় দু’শ বছর ধরে এই পৌষ মেলা এখানে হয়ে আসছে। দিনে দিনে এ মেলার আয়তন ও লোক সমাগম বাড়ছে। মেলায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন। ওইসময় মেলার আয়োজক পৌর প্যানেল মেয়র মো. নজরুল ইসলাম, শেখ মমতাজ উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব দুলাল মিয়াসহ আয়োজক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মেলায় ঘুরতে আসা শহরের দমদমা কালিগঞ্জ এলাকার মো. সুজন মিয়া জানান, শহরের পাশেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এই পৌষ মেলায় প্রতি বছরই সপরিবারে ঘুরতে আসি। এখানে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধূলার পাশাপাশি মুখরোচক খাবারের সমাহার বেশ উপভোগ্য। স্থানীয় সাইদুল ইসলাম জানান, শিশুদের নিয়ে নবীনগরের এই ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলায় এসেছি। এখানে নানা গ্রামীণ খেলা উপভোগের পাশাপাশি বাচ্চাদের নিয়ে বাহারি খাবারও খেলাম। মেলায় ঘুরতে আসা শিশু রিশামনি জানান, আমি বাবার সাথে মেলায় এসেছি। মেলার পরিবেশ অনেক সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। ঘোড়দৌড়, কুস্তি ও সাইকেল রেস দেখলাম এখানে ঘুরতে বেশ ভালো লাগছে।

পৌষ মেলা আয়োজক কমিটির সমন্বয়কারী শেরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রায় ২০০ বছর যাবৎ আমাদের বাপ দাদার আমল থেকেই পঞ্জিকা মতে প্রতিবছর বাংলা পৌষ মাসের শেষদিন ছাওয়াল পীরের দরগাহ সংলগ্ন মাঠে এ পৌষমেলা অনুষ্ঠিত হতো। পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য বজায় রেখে এখন আমরা এ পৌষমেলার আয়োজন করছি। এটি নবীনগরের ঐতিহ্যের অংশ। এখন মেলার সময় কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করার চেষ্টা থাকবে আমাদের।