ঢাকা,  সোমবার  ২৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১

ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলবে ‘সেতুবন্ধন’

প্রকাশিত: ১৩:৩২, ২০ আগস্ট ২০২৩

ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলবে ‘সেতুবন্ধন’

উদ্বোধনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রায় ৭০ কিমি জুড়ে বিছিয়ে আছে ফেনী নদী। এই নদী পার হয়েই স্বাধীনতার সময় খাগড়াছড়ির রামগড় হয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতে যান মুক্তিযোদ্ধারা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত থেকে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত কাঠের ব্রিজ দিয়ে অস্ত্র, গোলা-বারুদ এনে জমা করা হতো রামগড়ে। সেই ফেনী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’। এই সেতুবন্ধন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি ও যোগাযোগের নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে।

সেতুর পাশাপাশি রামগড়ে একই সঙ্গে চালু হতে যাচ্ছে স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন। এতে পার্বত্য অঞ্চলসহ চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মানুষ সহজেই ভারতে যাতায়াত করতে পারবেন। আর দুই দেশের পণ্য পরিবহনের খরচ ও সময় কমার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা, সংস্কৃতি, পর্যটনখাতের বিকাশসহ দুই পাড়ের দু’দেশে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে সরজমিনে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী নদী ফেনী নদীর ওপর নির্মিত ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ এর একপাশে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড় অপরপাশে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম অঞ্চল। সেতুটির নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। মূল সেতুর মুখেই বিজিবির নিরাপত্তা চেকপোস্ট। সেতুর মোট ১০টি পিলারের মধ্যে তিনটি বাংলাদেশ ও ৭টি বসানো হয়েছে ভারতের অংশে। বাংলাদেশ অংশে ইমিগ্রেশন ভবনের কাজও শেষ। ভারত অংশেও বিএসএফের নিরাপত্তা চেকপোস্ট রাখা হয়েছে। ইমিগ্রেশন ভবনের আগে সড়কে বসানো হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন মাপার স্কেল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে অবকাঠামোগত সব কাজই সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর প্রথমে মানুষের যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এরপর শুরু হবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি।

ইমিগ্রেশন ভবনের আশপাশে গড়ে উঠছে বিভিন্ন দোকানপাট। দুই দেশে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি হওয়া সেতুটি দেখতে বিকাল হলেই ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। উদ্বোধনের আগে সেতুটি এক নজর দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকেই আসছেন মানুষ। এমন একজন ব্যক্তি বিপুল বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, সেতুটি আর কিছুদিনের মধ্যেই চালু হবে। তাই দেখতে এলাম। স্মৃতি হিসেবে কিছু ছবিও তুলে রাখলাম।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ এর দৈর্ঘ্য ৪১২ মিটার, প্রস্থ ১৪ দশমিক ৫ মিটার এবং ডাবল লাইনযুক্ত। সেতুটিতে মোট ১০টি পিলার। পূর্বপ্রান্তে বাংলাদেশ অংশে ১৪০ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে রামগড় স্থলবন্দর। এ সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। ফলে সেতুটি চালু হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব কমে আসবে, বাড়বে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য।

২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ নামে ফেনী নদীর ওপর প্রস্তাবিত সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন। এর প্রায় আট বছর পর সেতুটি সব কাজ শেষে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সেতুটি চালু হলে বাংলাদেশ অংশে রামগড়-বারৈয়ারহাট গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর ভারতের অংশে প্রায় ১২শ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নবীনপাড়া-ঠাকুরপল্লি হয়ে সাব্রুম-আগরতলা জাতীয় সড়কে যুক্ত হবে।

সেতুটি চালু হলে রামগড় বন্দর দিয়ে ভারত সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য চলে যাবে ভারতের সাত রাজ্যে। এতে বাংলাদেশ পাবে রাজস্ব সুবিধা। আর কম সময়ে স্থলবন্দর হয়ে আগরতলা বিমানবন্দর দিয়ে ভারত যেতে পারবেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ। ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুম, আসাম, মিজোরাম ও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মিরসরাই, সীতাকুণ্ডসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মানুষ যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম হয়ে ভারতে যেতে হয় নানান কাজে। রামগড়ে নির্মিত এ সেতু চালু হলে এই বন্দর দিয়েই তারা এখন ভোগান্তি এড়িয়ে সহজে ও কম সময়ে ভারতে যেতে পারবেন। এছাড়া দেশভাগের সময় কেউ কেউ পরিবার নিয়ে ভারতে চলে যান। দুই দেশেই স্থানীয় অনেকের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। রামগড় স্থলবন্দরটি চালু হলে চাইলেই সহজে তারা দেখা করতে পারবেন তারা।

রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক সরোয়ার আলম বলেন, রামগড় ও সাব্রুম স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি দেখার জন্য ভারতীয় প্রতিনিধিদল সরজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করার জন্য রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলে দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে।

খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের পোর্ট সুপারিনটেনডেন্ট এস এস মাসুম বিল্লাহ বলেন, বন্দরে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন থাকবে। প্রথম পর্যায়ে যাত্রী পারাপার করা হবে। এরপর শুরু হবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি। আমাদের সব কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিডিউলের জন্য অপেক্ষা করছি।