ঢাকা,  মঙ্গলবার  ০৭ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ডাক্তার ছেলে এখন ‘জঙ্গি’, আক্ষেপে পুড়ছেন বাবা হেলাল উদ্দিন

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ১৪ আগস্ট ২০২৩

ডাক্তার ছেলে এখন ‘জঙ্গি’, আক্ষেপে পুড়ছেন বাবা হেলাল উদ্দিন

ছেলে ও পুত্রবধূর ছবি হাতে হেলাল উদ্দিন

‘আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়ে দুটো যমজ। অনার্সে পড়াশোনা করছে তারা। ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার বানানো। সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছে। কিন্তু আমার ছেলে ও ছেলের বউ যে জঙ্গি হবে সেটা কখনো ভাবিনি।’

চিকিৎসক ছেলে সোহেল তানজিমকে নিয়ে এমনভাবেই আক্ষেপ করছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামের হেলাল উদ্দিন। তানজিম ও তার স্ত্রী মাইশা ইসলাম ওরফে হাফসা ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হেলাল উদ্দিন। পরে তারা জানতে পারেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন মাইশা। সোহেল তানজিমও সেখানে ছিলেন। তবে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

সোহেল তানজিমের বাবা হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘তানজিম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এক বছর ধরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি করছিল। বেশ ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এবারের রোজার ঈদের সাতদিন পর আমাদের কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করেছিল। এতে আমরা অনেকটা ভেঙে পড়েছিলাম। ছেলে এতো বড় ভুল করলো কিভাবে! তবুও বাবা হিসেবে মেনে নিয়েছি। কদিন ধরে পত্রিকায় দেখছি বউসহ জঙ্গি হয়েছে। এটা মানবো কিভাবে?’

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার নির্জন পাহাড়ি এলাকার একটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে অভিযান চালিয়ে তিন শিশুসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)।

সিটিটিসি বলছে, তারা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য। অভিযানে তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা ও জঙ্গি প্রশিক্ষণসামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।

সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার হেলাল উদ্দিন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তানজিম সবার বড়।   

স্থানীয়রা জানান, তানজিম উগ্রবাদে জড়িত থাকার সন্দেহে ২০২২ সালে র‍্যাব-১ তাকে আটক করেছিল। তবে জামিনে বেরিয়ে চাকরি শুরু করেন, বিয়েও করেন। তখন আশায় ছিলেন ছেলে সব ছেড়ে দেবেন। ছেলের গতিবিধির ওপর বিশেষ নজর রাখতে শুরু করেছিলেন হেলাল উদ্দিন। খারাপ পথে গেলে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। তবে এতে কোনো লাভ হয়নি।

উল্টো পরিবারের অমতে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক করে ২০ বছর বয়সী মাইশা ইসলামকে বিয়ে করেন তানজিম। মাইশা নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর বাজার এলাকার সাইদুল ইসলাম ওরফে দুলালের মেয়ে।

তানজিম ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী ছাত্র ছিলেন উল্লেখ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেলে যেদিন ভর্তি হইলো (তানজিম) সেদিন ভাবলাম আল্লায় মুখ তুইলা চাইছে। সবাই কয় ডাক্তারের বাপ হইছি। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য সবাই বন্ধুর মতো। এরপরও এমনটি কেমনে হলো?’

খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করতেন সোহেল তানজিম। হেলাল উদ্দিন বলেন, হঠাৎ গত জুলাই মাসের শেষে হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, তানজিম চারদিন ধরে হাসপাতালে আসেন না। তার বন্ধু ও সহকর্মীরা ফোন দিয়ে পাচ্ছেন না। তার স্ত্রীর ফোনও বন্ধ। দু-তিনদিন এখানে-ওখানে খুঁজে না পেয়ে তিনি জিডি করেন।

খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক কৌশিক আহমেদ বলেন, গত ২৫ জুলাই কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখে তারা তানজিম ও তার স্ত্রীর ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে তার বাবার ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ জুলাই এনায়েতপুর থানায় জিডি করেন।

হেলাল উদ্দিন আক্ষেপ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক আশা ছিল ছেলে অনেক বড় চিকিৎসক হবে। তাকে ঘটা করে বিয়ে করাবো। হেলিকপ্টারে করে ছেলে-বউকে বাড়িতে নিয়ে আসবো। আমার সে আসা পূরণ হয়নি। আমার ছেলে আমার মানসম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে।’