ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শ্রীপুরে বৃদ্ধ ফালু মিয়ার রিকশা মেরামত হলো ছাত্রদের টিফিনের টাকায়

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

শ্রীপুরে বৃদ্ধ ফালু মিয়ার রিকশা মেরামত হলো ছাত্রদের টিফিনের টাকায়

গাজীপুরের শ্রীপুরে ৩৪ স্কুল শিক্ষার্থীর বেঁচে যাওয়া টিফিনের টাকায় মেরামত করা হয়েছে ষাটোর্ধ্ব ফালু মিয়ার ভাঙা রিকশা। সেই সঙ্গে ওই বৃদ্ধ রিকশা চালক পেয়েছেন শীতবস্ত্র ও এক মাসের খাবার।

করোনার সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় বরমী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন (বি এস এ) নামের একটি সংগঠনের ওই শিক্ষার্থীদের বেঁচে যাওয়া টিফিনের টাকায় এ ব্যবস্থা করে।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন বরমী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা নাসিরুল ইসলাম রনি।

জানা যায়, উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরমী গ্রামের মৃত একবর আলীর ছেলে হতদরিদ্র ফালু মিয়া দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও বিয়ের পর থেকেই তারা আলাদা করে দেয় ফালু মিয়াকে। এখন এ বাড়ি ও বাড়ির উঠানেই মাথা গুজার ঠাই হয় ফালুর। সম্প্রতি তার রিকশা ভেঙে গেছিলো। যার কারণে তিনি খুব সমস‌্যায় পরেছিলেন।

নাসিরুল ইসলাম রনি জানান, এই ছাত্র সংগঠনের সদস্যেরা প্রতিদিন জনপ্রতি ২০ টাকা করে চাঁদার জমানো অর্থ দিয়ে শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) বাদ জুম্মা ফালু মিয়ার রিকশা মেরামত করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আগামী এক মাসের খাবারের ব্যবস্থাও করেন তারা। যার মধ্যে রয়েছে— চাল, ডাল, তৈল, আলু, লবণ, মুড়ি, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় একাধিক পণ্য।

হাউমাউ করে কেঁদে ফালু মিয়া প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাহে- রিশসা চালইবার কাম আর করতে পারতেছি না। বয়স তো কম অইছে না। পুলাপাইন বড় কইরা লাভ নাই। আরেক জনের ছোট ছোট ছাউয়ালরা আমার লাইগ্যা যেইত্তা করছে তা বাহের কাম। হেগর লাইগ্যা দোয়া করলাম। আল্লা তাগোরে অনেক বড় করবো।’

সংগঠনের আরেক প্রতিষ্ঠাতা সাজিদ ইসলাম স্বাধীন বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই মানবতার কল্যাণে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে বড় হয়েছি। সেই থেকে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। প্রতি সপ্তাহে সকল সদস্যদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে তুলে ফান্ড গঠন করা হয়। এছাড়াও কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগে এলাকার বড় ভাই ও বিত্তবানদের কাছ থেকে সাহায্য চাই। উনারা কোনোদিন আমাদেরকে ফিরিয়ে দেননি। ভবিষ্যতে সহযোগিতা পেলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবে এই সংগঠনটি।’

সমাজসেবক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদের টিফিনের টাকায় বৃদ্ধের রিকশা মেরামত ও শীতবস্ত্রসহ খাবারের ব্যবস্থা মানবতার পরিচয় বটে। আজকের এ সকল ছাত্ররাই আগামীর মানবসেবক হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করে উৎসাহিত করা সমাজের বিত্তবান সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’

গাজীপুর কথা