ঢাকা,  শনিবার  ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শেকলে বাঁধা কালীগঞ্জের রনির দুরন্তপনা

প্রকাশিত: ১৩:১০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

শেকলে বাঁধা কালীগঞ্জের রনির দুরন্তপনা

গাজীপুরের কালীগঞ্জের প্রায় ১১ বছর বয়সের এক কিশোর রনি। গাছের শেকড়ের সঙ্গে শেকলে বেঁধে তালা দিয়ে রাখা হয় তাকে। রোদ-বৃষ্টিতে নগ্ন শরীরে খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর ধরে এভাবেই কাটছে ওই ছেলেটির জীবনের দুরন্তপণার দিনগুলো। ধারে-কাছে কাউকে দেখতে পেলেই ইশারা-ইঙ্গিতে শেকলের তালা খুলে দেওয়ার আর্তি তার। হঠাৎ করে দেখলে দৃশ্যটি যে কাউকেই হয়তো ব্যথিত করবে। কিন্তু এতিম রনির হতদরিদ্র পরিবারের দিনমজুর মায়ের পক্ষে বেঁধে রাখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

জেলার জাঙ্গালীয় ইউনিয়নের কাইলতিয়া গ্রামের সড়কের মোড়ে পৌঁছতেই দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন জংলার পাশে দাঁড়িয়ে দুরন্তপনা করছে এক কিশোর। কাছে গেলেই  চোখে মিলবে গাছের শেকড়ের সঙ্গে পায়ে শিকল বাঁধা তার।

লোহার শেকল। সেই শেকল দিয়ে পা আর শেকড়ের তালা লাগানো। মশার যন্ত্রনায়, পিপড়ার যন্ত্রনায় চোখ ছলছল থাকে তার। এই যন্ত্রনা বইয়ে স্যাতস্যাতে জায়গায় দাড়িয়ে-বসে থেকে কেটে যাচ্ছে তার বছরের পর বছর। গ্রামের দিন মজুর ফলোনি বেগম জানান, তার সন্তান রনি ছোটবেলায় অসুস্থতার পর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। পিতৃহীন সংসারে মাকে দিনমজুরি করে তিন সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার টানতে হয়। টাকার অভাবে ছেলেটির চিকিৎসা করাতে পারেননি। ছোটবেলায়ই রনির বাবা ইব্রাহীম মারা গেছেন। বাবা বেচে থাকাকালীন কয়েকবার কবিরাজ দেখানো হয়েছে, ঝার-ফুক দেয়া হয়েছে। তাতে কাজ না হওয়াই অর্থাভাবে আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি তার। এক সময় তার অস্বাভাবিক আচরণের মাত্রা বেড়ে গেলে পায়ে পড়ে শেকল। হোটেলে- বাজারে দিনমজুরি করে অভাবের সংসার চালানো মা বাধ্য হয়েই সারাদিন ছেলের পায়ের শেকল খুলতে পারে না। কাজ থেকে এসে সন্ধায় বা রাতে শুধু ঘরে নেওয়ার সময় শেকলটা খোলে। নিরুপায় এই মায়ের দাবি- সরকার বা বিত্তবান কেউ এগিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে রনি।

সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তপরের গাজীপুরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, একটি কিশোর শেকলে বাঁধা অবস্থায় রয়েছে, এটা খুবই দু:খজনক। আমি খোঁজ নিয়ে অন্তত প্রতিবন্ধী ভাতা এবং যতটুকু সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। স্বাভাবিক জীবনে যাতে সে ফিরে যেতে পারে এ জন্যে যতটুকু করণিয় আছে তার সব চেষ্টাই করা হবে। এছাড়া তার মাকেও বিধবা ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে ।

গাজীপুর কথা