ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

টঙ্গীতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ১৭ জুন ২০২০

টঙ্গীতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

টঙ্গীতে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম তানজিনা ইসলাম টুম্পা (১৭)। পুলিশ এ ঘটনায় টুম্পার স্বামী সাকিব মৃধাকে (২০) গ্রেফতার করেছে। টুম্পা এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। নিহত টুম্পা গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানার ইসলামপুর (দত্তপাড়া) আলম মার্কেট এলাকার মাইনুল ইসলাম টিটুর মেয়ে। যৌতুকের দাবিতে টুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে টুম্পার স্বামী সাকিবের ফাঁসির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাস্তায় বিক্ষোভ করে নিহত টুম্পার স্বজনরা।

টুম্পার নানা আবু হানিফ জানান, যৌতুকের জন্য টুম্পার ওপর প্রায়ই নির্যাতন চলত। টুম্পার সুখের জন্য তার স্বামী সাকিব মৃধাকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার ফার্নিচার, একটি মোটরসাইকেল ও প্রায় ১৫ লাখ টাকার যৌতুক দেয়া হয়। কিন্তু এত কিছু দেয়ার পরও সাকিবের চাহিদার শেষ ছিল না। সর্বশেষ কথিত ব্যবসার পুঁজির জন্য টুম্পাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিল সাকিব ও তার বাবা-মা। কিন্তু টুম্পা রাজি না হওয়ায় তার ওপর প্রায়ই নির্যাতন চালানো হতো। নির্যাতনে অতিষ্ঠ টুম্পা সম্প্রতি পিত্রালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। জীবনের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কথা জানিয়ে টুম্পা পরবর্তীতে স্বামীর বাড়িতে আর না দেয়ার জন্য তার বাবা-মাকে অনুরোধ জানায়। সম্প্রতি টুম্পাকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিতে স্বামী সাকিব দলবল নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে হানা দেয়। এ ঘটনায় থানায় জিডি করেন টুম্পার নানা আবু হানিফ। কিন্তু অবশেষে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে একধরনের জোর করেই টুম্পাকে শ্বশুর বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে যাওয়ার কয়েক দিন পরই গতকাল এ ঘটনা ঘটে।

নিহত টুম্পার ভাই সাজিদুল ইসলাম জানান, দুই বছর আগে একই এলাকার (আলম মার্কেট) সাইদ মৃধার ছেলে সাকিব মৃধার সাথে টুম্পার বিয়ে হয়। বয়স কম ও স্কুলে লেখাপড়া করায় তাদের পরিবার বিয়েতে রাজি ছিল না। কিন্তু স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে একধরনের জোর করেই টুম্পাকে সাকিবের সাথে বিবাহ দিতে বাধ্য করা হয়। বিয়ের আগে কথা ছিল, টুম্পা পরীক্ষায় পাস করলে তাকে লেখাপড়ার সুযোগ দিতে হবে। টুম্পা এ বছর ৪.৮৯ পয়েণ্ট পেয়ে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তির জন্য তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে অনুরোধ জানায়। কিন্তু তারা কলেজে ভর্তি হতে টুম্পাকে নিষেধ করে এবং সাকিবের কথিত ব্যবসার কথা বলে যৌতুকের জন্য তাকে চাপ দিতে থাকে। গতকাল সকালে টুম্পার শ্বশুর বাড়ি থেকে ফোনে জানানো হয়, টুম্পা ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।

টুম্পার নানা আবু হানিফ অভিযোগ করেন টুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে। তারা টুম্পাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাননি। এমনকি পুলিশকেও খবর দেয়া হয়নি। বরং তারা টুম্পার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার আগেই লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায় সাকিব ও তার স্বজনরা।
তবে টুম্পার শ্বশুর আবু সাঈদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টুম্পা আত্মহত্যা করেছে এবং তারা কখনো যৌতুক দাবি করেননি। এমনকি টুম্পাকে কখনো কোনো ধরনের নির্যাতনও করা হয়নি। টুম্পার আত্মহত্যার জন্য তারা কেউ দায়ী নন বলেও দাবি করেন টুম্পার শ্বশুর আবু সাঈদ।

এ দিকে নিহত টুম্পার সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী টঙ্গী পূর্ব থানার এসআই সেলিম জানান, টুম্পার লাশ তারা হাসপাতালে পেয়েছেন এবং সেখানেই সুরতহাল করেছেন। গলায় ফাঁসির দাগ ছাড়া শরীরে আর কোনো আঘাতের চিহ্ন পাননি বলেও তিনি জানান। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পরই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে বলেন এসআই সেলিম। টুম্পার স্বামী সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় থানার ডিউটি অফিসার এসআই নূরেজা আক্তার বলেন, এখনো এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি।

গাজীপুর কথা