দেশের শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। আর স্কুলটিকে দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করায় খুশি শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।
জানা যায়, ১৯৭৩ সালে ১২৩ নং বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬০। বিদ্যালয়ের একতলার দুইটি ভবন রয়েছে। যার কক্ষ সংখ্যা ৬টি। এর মধ্যে ২টিকে অফিসের জন্য ব্যবহার হয় বাকি চারটিতে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। বিদ্যালয়টিতে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ও বঙ্গবন্ধু লাইব্রেরি স্থাপনসহ বাংলা বর্ণমালা এবং বিভিন্ন প্রকৃতির সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার গুনগত পরিবর্তন ও মানোন্নয়নে বিদ্যালয় লাল-সবুজে সজ্জিত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের বাইরের দেয়াল ও ভেতরের শ্রেণিকক্ষে আঁকা হয়েছে রং-বেরংয়ের ছবি। একতলা ভবনটি যেন একটি পাঠ্য বই।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ করতে বিভিন্ন লেখা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ বিভিন্ন ছবি দিয়ে পুরো বিদ্যালয়ের ভবন সাজানো হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ভবনের পাশে বলাকা নয়নাভিরাম ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরো বিদ্যালয় সাজিয়েছে নিবিড় পরিচর্যায়।
মির্জাপুরের বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনেয়ারা বেগম বলেন, শিশুদের ঝড়ে পড়া রোধ, শতভাগ উপস্থিতি, সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক পরীক্ষা নেওয়া হয় নিয়মিত। এর আগেও কয়েকবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। গত বছরও বিদ্যালয়ে ঝড়ে পড়া রোধ বিষয়ে দেশে প্রথমস্থান অর্জন করেছিলাম। সে সময়েও পুরস্কার দেয়া হয়েছিল বিদ্যালয়কে।
তিনি বলেন, ‘তবে বারবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বাইমহাটি বিদ্যালয়টির মাঠ নেই। বিদ্যালয়ে একটি ভবন ও বাউন্ডারি দেয়াল খুবই প্রয়োজন। বিদ্যালয় ঘেঁষে সড়ক ও জনপদের কিছু জায়গা রয়েছে সেই জায়গাটুকু যদি তারা ব্যবহার করতে দিত তাহলে শিক্ষার্থীরা আউটডোর শিক্ষাটা আরও ভাল পেত।
হোসনেয়ারা আরও বলেন, বিদ্যালয়টি এক সময় অবহেলিত ছিল। ২০০০ সালে আমি এখানে যোগদানের পর সকলের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের রুপ পরিবর্তন করেছি। গত বছরের নভেম্বর মাসে জানতে পেরেছি জাতীয় পর্যায়ে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে বাইমহাটি বিদ্যালয়ের নাম উঠেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের নেতৃবৃন্দ, অভিভাবক ও শিক্ষা অফিসের সহযোগিতায় বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে পুরস্কার লাভ করছে। গত বছরের নভেম্বরে বিষয়টি আমরা জেনেছি। সকলের অবদান রয়েছে বিদ্যালয়টি শ্রেষ্ঠ হওয়ার পেছনে। প্রধানমন্ত্রী শ্রেষ্ঠ অর্জনের পুরস্কার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দদেবেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেন, গত নভেম্বরে আমরা শুনেছি বিদ্যালয়টি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছে। তবে অফিশিয়ালি এখনও আমরা কোনো চিঠি পাইনি।
জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে খুবই আনন্দিত হয়েছি বিদ্যালয়টি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ায়। একটা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকা ও এলাকার মানুষের সৎ ইচ্ছা থাকলে একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সারা বাংলাদেশের মধ্যে মডেল হতে পারে। এটা থেকে আমাদের সকলের শিক্ষণীয় আছে। এরকম একটা গৌরভ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, শিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা ও এলাকাবাসীর সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।
এছাড়া বাইমহাটি বিদ্যালয়টিকে যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।
গাজীপুর কথা