তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন ও জাদুঘর আয়া সোফিয়া। দীর্ঘ ৮৬ বছর পর আজ শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ার মাধ্যমে মসজিদ হিসেবে ফের চালু হতে যাচ্ছে তুরস্কের ঐতিহাসিক এ জাদুঘরটি।
দেশটির রাষ্ট্রপতি ও বিরোধী দলীয় নেতাদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আসল পরিচয়ে আয়া সোফিয়ার নবযাত্রা শুরু হবে। খবর ইয়ানি শাফাক
আয়া সোফিয়া মসজিদ। (ফাইল ফটো)
১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া জাদুঘর ও দর্শনীয় স্থান আয়া সোফিয়া মসজিদ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আসল পরিচয়ে ফিরছে আজ। জানা গেছে, আজ জুমার নামাজে প্রায় দেড় হাজারের মতো মুসল্লি উপস্থিত থাকবেন। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইপে এরদোয়ান, ন্যাশনাল মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) নেতা দেভলেত বেচিল উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী অনেকেই পক্ষ-বিপক্ষ মত দিয়েছেন। তবে তুরস্কের বিরোধী দলীয় নেতা মেরাল আখসেনার এরইমধ্যে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে তিনি আয়া সোফিয়া নিয়ে রাজনীতি না করার মতামতও তুলে ধরেছেন।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি জন্মলগ্ন থেকে কখনও গির্জা, কখনও ক্যাথলিক গির্জা কখনও মসজিদ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি ৯১৬ বছর ধরে দীর্ঘ সময় চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আবার ১৪৫৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ৪৮১ বছর ধরে মসজিদ হিসেবেই পরিচিত ছিল এটি। তারপর ৮৬ বছর যাবত এটা জাদুঘর হিসেবে পরিচিত ছিল।
আয়া সোফিয়া মসজিদ। (ফাইল ফটো)
অবশেষ গত ১০ জুলাই তুর্কি আদালতের রায়ে ১৯৩৪ সালের তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের জাদুঘরে রূপান্তরিত করার আদেশটি রহিত করার পর পুনরায় মসজিদ হিসেবে চালু করতে বাঁধা দূর হয়। এ মসজিদের জন্য এরইমধ্যে ২ জন ইমাম ও ৪ জন মুয়াজ্জিন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর আজ জুমা আদায়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদে রূপান্তরিত হবে এটি। প্রতিদিন ধ্বনিত হবে আজানের সুর।
গত ১৬ জুলাই তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক অধিদফতর এটি মসজিদে রূপান্তরিত হওয়ার পরে আয়া সোফিয়া পরিচালনার জন্য সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির অধীনে দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়া সোফিয়ার সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ তদারকি করবে এবং ধর্ম বিষয়ক অধিদফতর ধর্মীয় সেবা তদারকি করবে। এছাড়াও ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি বিনামূল্যে পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আয়া সোফিয়া ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইন সম্রাজ্যের অর্থডোক্স খ্রিস্টানদের সর্ববৃহৎ গির্জা হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ১৪৫৩ সালে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ ইস্তাবুল বিজয় করে তা ক্রয় করেন এবং মসজিদ হিসেবে ওয়াকফ করে দেন বলেও জানা যায়। ৪৮১ বছর পর ১৯৩৪ সালের ২৪ নভেম্বর মোস্তফা কামাল (আতাতুর্ক) পাশার মন্ত্রীপরিষদ এটিকে জাদুঘরে পরিণত করে।
আয়া সোফিয়া মসজিদ। (ফাইল ফটো)
অবশেষে ৮৬ বছর পর আবার তা মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেয় তুর্কি আদালত। যেখান থেকে নিয়মিত ৪ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে সুমধুর আজানের সুর। তবে আয়া সোফিয়ায় নামাজের সময় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্থাপনা ও নিদর্শনগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হবে।
গাজীপুর কথা