সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পরকালের পুণ্যের আশায় বছরের পর বছর ধরে কবর খননের কাজ করেন তারা। করোনার মহামারির ভয়ও তাদের আটকাতে পারেনি। দিন আনে দিন খায় এসব গোর খোদকরা এলাকায় কারও মৃত্যুর সংবাদে নিজেদের কাজ ফেলে সবার আগে মাটি কাটার যন্ত্র নিয়ে ছুটে যান গোরস্থানে। তারা কারও ডাকের অপেক্ষা করেন না। পারিবারিক অনুমতি নিয়ে হাতের নিপুণতায় শেষযাত্রার আপন নিবাস তৈরি করেন মনের মাধুরী মিশিয়ে।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার বহেরারচালা গ্রামের কাঠমিস্ত্রি ইউনুস আলী জানান, এলাকায় কেউ মারা গেলে তারা চার-পাঁচজন যুবক মিলে কবর খননের কাজ শুরু করেন। তাদের দলের বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা দিন আনে দিন খায়। তবে কেউ মারা যাওয়ার খবরে সবাই কাজ ফেলে স্বেচ্ছাশ্রমের এ কাজে যোগ দেন।
এই দলে রয়েছেন একই এলাকার অটোচালক ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, ‘কবর খনন এখন অনেকটা আমাদের নেশা হয়ে গেছে। স্বেচ্ছাশ্রমের এ কাজের মাধ্যমে আমি মনের প্রশান্তি খুঁজে পাই।’
স্থানীয় সমাজকর্মী শাফি কামাল বলেন, ‘এখনো প্রতিটি গ্রামের কিছু লোকজন এই গোর খোদকের ভূমিকায় রয়েছেন। যদিও শহর এলাকায় এ অবস্থা নেই। বিনা পারিশ্রমিকে এ কাজ করাটাই যেন তাদের কাছে আনন্দের। অথচ সারা বছর আমরা এ মানুষগুলোর কোনো খবর রাখি না। তাদের সম্মান জানানো প্রয়োজন।’
শ্রীপুর গ্রামের ফজলে মমিন আকন্দ বলেন, ‘মহামারির সময় নানাজন নানাভাবে প্রণোদনা পেলেও তাদের ভাগ্যে তা জোটেনি। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি গোর খোদক দলের জন্য সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি কিনে দিয়েছি। এভাবে সমাজের প্রত্যেকের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এসএম আনোয়ারুল করিম বলেন, তারা সামাজিকভাবে দায়িত্বপালন করে একটি ভালো কাজের অংশীদার হয়েছেন। এসব কাজ প্রশংসনীয়। তবে এখন পর্যন্ত গোর খোদকদের সহায়তা করার মতো আমাদের সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের মধ্যে যদি কোনো বয়স্ক থাকেন তাহলে সরকারি সহায়তা কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
গাজীপুর কথা