ঢাকা,  বুধবার  ২২ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কালু হিজড়ার কৃষির প্রতি ভালোবাসা...

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ১ মে ২০২৪

কালু হিজড়ার কৃষির প্রতি ভালোবাসা...

সংগৃহিত ছবি

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাইমাইল এলাকায় ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কালু হিজড়া। তার সঙ্গে অবসরে সময় দেন অন্য হিজড়ারাও। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা চাওয়া এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চাল তুলতেন যারা তারাই এখন কৃষিকাজ করছেন। শুধু ধান নয়, কালু হিজড়া মিষ্টিকুমড়া, ডাঁটাশাক, পেঁপে, বাদামসহ নানা সবজিও চাষ করেছেন। এতে তাদের নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়েও বিক্রি হচ্ছে করা হচ্ছে বাজারে। 

গত পাঁচ বছর আগে যেখানে ছিল ইটের ভাটা, সেখানেই ফলছে ধানসহ অন্যান্য শাক-সবজি। চলতি বছরে তারা বাইমাইল এলাকায় ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান, পেঁয়াজ, মিষ্টিকুমড়া, লাল শাক, মুলা, কলমি শাক, টমেটোসহ বিভিন্ন কৃষির আবাদ করেছেন। ২-৩ বছর ধরে তারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে এ কাজ করে আসছেন। কালু হিজড়া এ বছর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। এ ছাড়া কয়েক বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া, পেঁপেসহ নানান সবজি। কিছু অংশে লাগিয়েছেন বাদাম। 

এলাকাবাসী বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল এলাকায় বাঁশতলায় ৩০ জনের এক দল হিজড়া রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। তাদের গুরু মা কালু হিজড়া। তারা বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি, দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তোলেন। তবে কালু হিজড়া টাকা তোলেন না, কৃষিকাজ করেন। দলের অনেকেই অবসর সময় পেলে কৃষিক্ষেতে গিয়ে সময় কাটান। আসতে আসতে কালু হিজড়ার কাজ দেখে অনেক হিজড়াই কাজ শিখে ফেলেছেন। একদিন আমাদের ধারণা সবাই কৃষিকাজে চলে আসবেন। 

শিল্পী ওরফে কালু হিজড়া বলেন, আমার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু নিতে ইচ্ছা করে না। মানুষের দুয়ারে না গিয়ে কৃষিকাজ করতে ভালো লাগে। অনেক আগে থেকেই গরু হাঁস-মুরগি পালন, সবজি চাষ এগুলো ভালো লাগে। তবে সব হিজড়ার ক্ষেত্রে এমন নয়, অনেকেরই ভালো লাগে না, কিন্তু আমার ভালো লাগে। 

তিনি আরও বলেন, মানুষ দেখুক, আমাদের সহযোগিতা করলে আমরাও কিছু করতে পারি। সুযোগ দিলে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। সরকারিভাবে যদি আমাদের সহযোগিতা করা হয় তাহলে আমরা কৃষিকাজে লাভবান হব। কিন্তু সরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। 

জমির তত্ত্বাবধানকারী ওসমান মিয়া বলেন, এই দাগে ৩৮ বিঘা জমি আছে। কালু হিজড়া ১০-১২ বিঘা জমি নিয়ে ধান ও সবজি চাষ করছেন। ওদের অনেক মানুষ আছে, ওরা কাজ করে। এতে আমারও লাভ হয়, ওরাও চলতে পারে। কালু হিজড়া যেটা করছে এটি মহৎ কাজ এবং প্রশংসার দাবিদার। আমাদের সমাজের জন্য খুবই ভালো। 

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম খান বলেন,  হিজড়া সম্প্রদায় কৃষিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে, এটি ভালো উদ্যোগ। কালু হিজড়াসহ সবাইকে তাদের কৃষিকাজে সহযোগিতা করতে চাই। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আগামী বছর থেকে তাদের ধানবীজ, সার কীটনাশক দেওয়া হবে।