ঢাকা,  সোমবার  ০৬ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বর্জ্য থেকে হবে জৈবসার, আনন্দিত কাপাসিয়ার কৃষকরা

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ১৬ অক্টোবর ২০২৩

বর্জ্য থেকে হবে জৈবসার, আনন্দিত কাপাসিয়ার কৃষকরা

.

দেশে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম বারের মতো গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, অফিস কিংবা শিল্পকারখানার ফেলে দেওয়া ময়লা, আবর্জনা ও বর্জ্য জাতীয় পদার্থ থেকে উৎপাদন হবে কৃষি জমির উর্বরতা ও ফলন বৃদ্ধির প্রধান উপকরণ জৈবসার। সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিকঠাক থাকলে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ সার উৎপাদন কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টের দ্বায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। এ দিকে এমন খবর শোনে কাপাসিয়া উপজেলার স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। 

সরেজমিনে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। কবে নিজ উপজেলার মধ্যে উৎপাদিত জৈবসার জমিতে ব্যবহার করতে পারবেন। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জের সূর্যমুখী ফুলের চাষী আবুল হাসেম জানিয়েছেন, বাজারের প্রচলিত সারের খবর জোগাতে তাদের অনেক কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। তিনি বলেন, যদি আমাদের উপজেলায় সার উৎপাদন হয়। আমরা কম দামে কিনতে পারমু। আবার এখানকার জৈবসার জমির ফসল উৎপাদনেও সফলতা অর্জন হবে। আবুল হাসেম বলেন, আমরা অর্ধশতাধিক কৃষক আছি কৃষি সারের দামের কারণে জমিতে সার ঠিকমতো দিতে পারিনা। তবে এই খানকায় সার উৎপাদনের খবর শোনে আমরা সবাই খুশি।

জানাগেছে, এ অঞ্চলে পরিবেশ সুরক্ষা, অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ কৃষি জমিতে কি ভাবে কাজে লাগানো যায়। এ নিয়ে বিস্তর চিন্তা ও বিশ্লেষণ করেন। কাপাসিয়ার জনপ্রিয় নেত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি। 

এর পরে তিনি এ বিষয়টি নিয়ে একটা পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও প্রজেক্টের প্রধানদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেন। কাপাসিয়া সদরের সাফাইশ্রী এলাকায় বানার নদের তীরে প্রায় দেড় বিঘা জমির উপর প্রায় সাত বছর আগে একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ। দীর্ঘ এ সময়ে উপজেলা প্রশাসন,পরিবেশ অধিদপ্তর,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শ্যামল বাংলা কৃষি ফার্মের সম্মিলিত অর্থায়নের মাধ্যমে  এর কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। এ শুধু অপেক্ষা সরাসরি উৎপাদন কাজের। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিকঠাক থাকলে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুধু হবে সেই মাহিন্দ্রক্ষণ কৃষকের আবদার উন্নত মানের জৈবসার। 

এই কারখানায় উপজেলা সদরের সকল বাসা বাড়ি ও হাট বাজারের ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। সঙ্গে আশপাশের খাল বিলের কচুরিপানা,লতাপাতা ও গরু ছাগলের বিষ্ঠার মিশ্রণ ঘটিয়ে জৈবসার উৎপাদন করা হবে। পরিবেশবান্ধব এ সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং মাটি ও পানির গুণগতমান অক্ষুণ্ণ থাকবে। যার ফলে এর সুফল সরাসরি কৃষক ও কৃষি চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলেই সুবিধা ভোগ করবেন। এমন কি স্থানীয় পর্যায়ে প্রাকৃতিক নির্বাচন আরও সুন্দর ও পরিবেশ বান্ধব হয়ে উঠবে। এতে করে আগামী প্রজন্মের কাছে বসবাসযোগ্য একটি পরিবেশ উপহার দেওয়া যাবে। 

কাপাসিয়ার ময়লা-আবর্জনা বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈবসার উৎপাদন কাজে প্রধান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে শ্যামল বাংলা কৃষি ফার্ম লিমিটেড। শ্যামল বাংলা কৃষি ফার্মের দ্বায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ সোনালীনিউজকে জানিয়েছেন, এ উপজেলার যেসব ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈবসার উৎপাদন করা হবে।

এতে করে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন ও সফলতা অর্জন হবে। কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, এই সার বালি মাটিকে দ্রুত কাদামাটিতে রুপান্তরিত করে এবং মাটির খাদ্য উৎপাদনকে উদ্ভিদের গ্রহণোপযোগী করে তোলে। এই জন্য বালি ও কাঁকরযুক্ত মাটির জন্য এটা আদর্শ সার। এটা ধান, আলু, আখ, আম লিচু, কাঁঠাল, শসা, করলা, ঢেড়স, চিচিঙাসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। 

কৃষকরা আধুনিক বিশ্বের কৃষি প্রযুক্তি থেকে অনেকটা দুরে আছে। তবে অতি সম্প্রতি কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশ সরকার কৃষক ও কৃষি উন্নয়ন যেসব কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। এর মধ্যে কাপাসিয়ার এই প্রজেক্ট নিসন্দেহে কৃষক, কৃষি উন্নয়ন, সফলতা এবং সম্ভাবনা আরও বেশি বিকশিত হবে। 

কাপাসিয়ার জনপ্রিয় নেত্রী ও গণমানুষের প্রিয়মুখ  সিমিন হোসেন রিমি (এমপি) বলেন, তার দীর্ঘ দিনের একটি চিন্তা ও পরিকল্পনা ছিলো কি ভাবে বর্জ্য পদার্থকে কাজে লাগিয়ে কৃষক ও কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায় এবং এই উপজেলায় পরিবেশ উন্নয়নে কি করা যায়। 

সেই চিন্তা থেকেই সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দৌড় ঝাপ শুরু করি। তিনি আরও বলেন, অনেক দিন পরে হলেও উপজেলার বাসিন্দার জন্য দেখা আমার সোনালী স্বপ্ন আজ বাস্তাবয়নের পথে। এটা আমার কাছে অনেক প্রাপ্তির। 

এমপি রিমি আরও জানান, আমাদের দেশের কৃষক ও কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার নানা মুখি উদ্যোগে প্রতি বছেরই গ্রহণ করে থাকে। তবে সরকার এর মধ্যে শুধু কৃষি সারের জন্য গত বছর  ভর্তুকি দিয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। 

এ অবস্থা থেকে উত্তোলন ও খরচ কমানো এবং কৃষি উন্নয়নে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে এ ধরনের প্রজেক্ট যদি পর্যায় ক্রমে দেশের সকল উপজেলায় গড়ে তুলা যায়। তাহলে এক দিকে পরিবেশ উন্নয়ন হবে। অন্য দিকে কৃষক ও কৃষি উন্নয়ন আরও বেশি বেগবান হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের কৃষি ফসল উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এমপি বলেন, এখোনি সঠক ভাবে বলা যাচ্ছে কত পরিমাণ সার এখান থেকে উৎপাদন হবে। তবে পুরোপুরি যখন উৎপাদন শুরু হবে। তখন বলা যাবে এর সক্ষমতা কত।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এনডিসি সিনিয়র সচিব (অব) সুরাইয়া বেগম এর মতে, বাংলাদেশ সরকারের উপজেলা পর্যায়ের এ ধরনের প্রজেক্ট নিসন্দেহে পরিবেশ উন্নয়ন ও কৃষক এবং কৃষি আধুনিকায়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, কাপাসিয়ার মতো ময়লা-আবর্জনা থেকে জৈবসার উৎপাদনের ব্যবস্থা দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে নিরব বিপ্লব ঘটবে।