ঢাকা,  মঙ্গলবার  ৩০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ইটভাটার আগুনে পুড়ল ৪০০ বিঘা জমির ধান

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ইটভাটার আগুনে পুড়ল ৪০০ বিঘা জমির ধান

ফাইল ছবি

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামের ২০০ কৃষকের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমির বোরো ধান ইটভাটার আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে পাশের ধরিনাশেরা গ্রামের কৃষকদেরও ক্ষতি হয়েছে। ইটভাটার গ্যাসে কৃষকদের জমির ফসল পুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা পরিবার নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শন করা হলেও ক্ষতিপূরণ দেবে কি-না তা নিশ্চিত হতে পারেনি কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় জমির ফসল পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাছপালা ও সবজির বাগান। ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পথে বসেছে এসব কৃষক পরিবার। তারা বলছেন, ঈদের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ভেঙে দিলেও আবার কয়েক দিন পর থেকে ইটভাটা চালু হয়ে যায়। প্রথম থেকে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা বন্ধের দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইট পোড়ানো হয় এ ভাটায়। কয়েক দিন পরপর ইটভাটায় কয়েক দফায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে অদৃশ্য কারণে ইট পোড়ানো হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ নীরবতা পালন করে বলে কৃষকরা দাবি করেন।

স্থানীয়রা জানায়, ২০১২ সালে কাপাসিয়ার তারাগঞ্জের ফেটালিয়া গ্রামে এসকেএস ইটভাটা স্থাপিত হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কর্তৃপক্ষ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। কখনও ফেটালিয়া ব্রিক ফিল্ড, ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড নামে ইটভাটা পরিচালনা করা হলেও বর্তমানে এসকেএস নামে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছে কর্তৃপক্ষ। এ ভাটার ২০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদ রয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় ওই গ্রামের বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছে ফুল-ফল থাকে না, সব অকালেই ঝরে যায়। প্রতি বছর যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে তা হলো ফসলের মাঠ কালো ধোঁয়া ও তাপে পুড়ে যায়। বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামটি ধান উৎপাদনে প্রসিদ্ধ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের আয়ের মূল চালিকাশক্তি কৃষি।

কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানে দুধ আসার পরপরই ভাটার তাপে সেই ধান পুড়ে গেছে। ধারদেনা করে জমি চাষ করেছি। ধান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয়ে গেল। এখন কীভাবে ধারদেনা পরিশোধ করব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

কৃষক আব্দুল হাই বলেন, তিনি ও তার ভাই আনোয়ার একসঙ্গে ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। আবাদি জমির পাশে ইটভাটা নির্মাণ হওয়ায় প্রতি বছরই তাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। ইটভাটার ধোঁয়ায় তাদের ক্ষেতের সব ধান পুড়ে গেছে। ওই জমির ফসল দিয়েই সারা বছরের খাবারের জোগান হয়। কিন্তু ভাটার গ্যাসের কারণে সব ফসল জমিতেই পুড়ে গেল।

উপজেলার ফেটালিয়া গ্রামের কৃষক সাদির বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমির ফসল নষ্ট হইছে। এই এক বিঘা জমির ধান দিয়ে সারা বছর খাবার জোগাই। এটাই আমার একমাত্র আয়ের জায়গা। এখন আমি কী করব? আমার স্বপ্ন ক্ষেতেই পুড়ে গেল। শুধু আমি নই, এই এলাকার শতাধিক কৃষকের স্বপ্নের ফসল এই ভাটার গ্যাসে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ থেকে বলছে ক্ষতিপূরণ দেবে। তবে এখনও যোগাযোগ করেনি।’

নাশেরা গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার জানান, ঋণ নিয়ে দুই বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেন তিনি। এতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। কিছু দিনের মধ্যে ধান ঘরে তোলা যেত। এরই মধ্যে ইটভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে তার স্বপ্নের ফসল। কষ্টে অর্জিত ফসল ঘরে তোলার আগেই পুড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তিনি। এখন ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, পরিবারের খাদ্যের জোগান নিয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ফেটালিয়ার বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন বলেন, দুই শতাধিক কৃষকের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ পেতে কৃষকরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাবে কি-না এখনও বলা যাচ্ছে না।

কৃষক আব্দুল বাতেনের ছেলে আবুল কাসেম বলেন, আমার বাবা একজন বর্গাচাষি। জমিতে কাজ করতে গিয়ে ভাটার ধোঁয়ায় তার তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বাবাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, পুড়ে যাওয়া ফসলের দ্রুত ক্ষতিপূরণ ও পরবর্তীকালে এমনটা যেন আর না ঘটে তার স্থায়ী সমাধান কার হোক।

ইটভাটার মালিক রমিজ উদ্দিন রমি বলেন, আগুনের তাপে কিছু কৃষকের ধানে ফুল আসার সময় নষ্ট হয়েছে। এ কৃষকরা ইটভাটার গেটে তালা মেরে দিয়েছে। তিনি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেবেন কি-না জানতে চাইলে বলেন, ‘জানি না। কারণ আপাতত ইটভাটা বন্ধ আছে। আমি এখনও লাইসেন্স করতে পারিনি।’ 

কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার মঞ্জুরুল আমিন বলেন, কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত ফসল পরিদর্শন করেছি। অনেক কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। যেসব কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাদের তালিকা করে উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছে জমা দিয়েছি।

এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বশাক বলেন, ক্ষতিপূরণ পেতে কৃষকদের আবেদন করতে বলা হয়েছে।