ঢাকা,  শুক্রবার  ০৩ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আপাতত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

টিকা পেতে আরো সময় লাগবে: বায়োটেক মুখপাত্র

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২০ অক্টোবর ২০২৩

টিকা পেতে আরো সময় লাগবে: বায়োটেক মুখপাত্র

বায়োটেক

ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফিলিপিন্স, বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশ। হয়তো এক সময় এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। আপাতত আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

বৃহস্পতিবার ভারতের হায়দরাবাদে বিখ্যাত ভ্যাকসিন গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান বায়োটেকের মুখপাত্র এ কথা বলেন। 

ভারত সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের বায়োটেক পরিদর্শনকালে মুখপাত্র আরও জানান, এইচআইভিসহ তাদের উদ্ভাবিত ১৯টি ভ্যাকসিন ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে চারটি ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া রয়েছে দুই ধরনের রোটা ভাইরাস, টাইফয়েড এবং ম্যালেরিয়া। 

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা এখন ভারত সফরে রয়েছেন। সাংবাদিকদের এই সফরের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে এই সফর। তিনদিন দিল্লি সফর শেষে ১৮ অক্টোবর বুধবার তাদের নিয়ে আসা হয়েছে হায়দরাবাদে। বুধবার সাংবাদিকরা সেখানে পরিদর্শন করেন বিখ্যাত গোলকুণ্ডা দুর্র্গ। 

বাহমনি কুতুব শাহ কয়েকশ’ বছর আগে এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। ৪৮০ ফুট উঁচু দুর্গটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ৬২ বছর। সাংবাদিকদের বৃহস্পতিবারের পরিদর্শন তালিকায় শুরুতেই ছিল ভারত বায়োটেক। হায়দরাবাদ মূল শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সবুজে ঘেরা বিশাল এলাকায় নির্মিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি নীরবে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বের মানুষ, পশু ও গাছপালার স্বাস্থ্য রক্ষায়। 

প্রশ্নের জবাবে বায়োটেকের মুখপাত্র জানান, ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি না হলেও তিনি আশাবাদী একদিন ভ্যাকসিনের মাধ্যমেই এই অভিশপ্ত মহামারি থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। 

প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, কোভিড-১৯ এখন আর মহামারি না থাকলেও এর কিছু বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া মানব সমাজে রয়ে গেছে। যারা মারাত্মক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রয়েছেন তাদের জন্য কোভিড এখনো বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি তাদের আবিষ্কৃত কো-ভ্যাক্স নিয়ে আরও গবেষণা পরিচালনা করে যাচ্ছে। 

এখন আর ভ্যাকসিনটি ইঞ্জেকশন আকারে দিতে হবে না। নাকের মধ্যে একটি ড্রপ দিলেই চলবে। এতে ভ্যাকসিনের সাইড এফেক্ট আরও কমে যাবে। তিনি দাবি করেন, বিশ্বে এ পর্যন্ত যেসব কোভিড ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে এর মধ্যে কো-ভ্যাক্স সবচেয়ে নিরাপদ। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মাত্র ১৫ শতাংশ, যেখানে অক্সফোর্ড, মডার্নার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ৭০ শতাংশ। মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, তারা অসংক্রামক রোগ ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিকসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারেও অনেকটা এগিয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই হয়তো মানব জাতি এই ভয়ংকর দুটি রোগ থেকে মুক্তি পাবে।

বায়োটেক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় বিশে^র সবচেয়ে বড় টি-হাবে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনার নানা ধারণা নিয়ে কাজ করে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত পণ্য সঠিক পদ্ধতিতে উৎপাদন এবং বাজারজাত করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয়। 

হায়দরাবাদ শহরের আইটি হাব এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বিশাল ভবনে একদল গবেষণাকর্মী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন এসব বিষয় নিয়ে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এবং বৃদ্ধি করা যায় সে ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয় এই প্রতিষ্ঠানে। ভারত সরকার প্রতিষ্ঠিত টি-হাব প্রতিষ্ঠানটি এখন পরিচালিত হচ্ছে একটি গভর্নিং বডির মাধ্যমে। 

স্বাধীনভাবে তারা যাতে কাজ করতে পারেন সেজন্যই এই ব্যবস্থা। সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বোর্ডের সদস্য। 

টি-হাব পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় টি-ওয়ার্ক নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তাদের পণ্য তৈরিতে সহায়তা করে। বলা যায়, টি-হাবের ধারণাগুলো বাস্তবায়নে টি-ওয়ার্ক কাজ করছে। 

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাংবাদিকদের জানান, এই প্রতিষ্ঠানে খুব ছোট যন্ত্রপাতি থেকে শুরু হাই টেকনোলজির পণ্যও তৈরি করা হয়। মহাকাশে নিক্ষেপিত ভারতের দ্বিতীয় রকেটের অনেক কাজ হয়েছে টি-ওয়ার্কে। তিনি সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক ঘুরে দেখান।

প্রায় একযুগ আগে হায়দরাবাদ সফর করেছিলাম। তাও আবার একই প্রোগ্রামে। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে দুই দেশ থেকেই এ ধরনের প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়। ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে শুধু সংবাদকর্মীই নয়, মুক্তিযোদ্ধা, যুব সমাজের প্রতিনিধি, সংস্কৃতি প্রতিনিধি দলকে ভারতে নিয়ে যায়। ভারত থেকেও বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় এ ধরনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে নিয়ে যায়। 


এক যুগ পর হায়দরাবাদ সফরের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখনো মনে আছে, সেই সময় সেখানে আইটি সিটি দেখানো হয়েছিল। তখনই হায়দরাবাদ শহর ছিল লোডশেডিং মুক্ত। ওখান থেকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পুরনো শহরের চার মিনার দেখাতে। মুঘল আমলে তৈরি এই মিনার দেখার জন্য হাজার হাজার পর্যটক যান প্রতি বছর। পরে আমাদের দেখানো হয়েছিল ডা. রেড্ডি ওষুধ কারখানা। 

শেষ দিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল রামোজি ফিল্ম সিটি পরিদর্শন। এবারও রামোজি ফিল্ম সিটি দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গত ১২ বছরে হায়দরাবাদ শহরের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। শহরের কিছু কিছু এলাকা দেখে মনেই হয় না এটি ভারতের কোনো শহর। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে এই শহর। বিশ্বের সকল বিখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি বিশাল বিশাল দৃষ্টিনন্দন ভবন তৈরি করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।