ঢাকা,  মঙ্গলবার  ৩০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

প্রধানমন্ত্রীর আগমনে আশায় বুক বাঁধছে নীলফামারীবাসী

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ৩১ জুলাই ২০২৩

প্রধানমন্ত্রীর আগমনে আশায় বুক বাঁধছে নীলফামারীবাসী

ফাইল ছবি

সাড়ে চার বছর পর রংপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে আশায় বুক বাঁধছে উত্তরের মানুষ। নীলফামারীর সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পাওয়ার স্বপ্ন দ্রুত বাস্তবায়ন ও গেজেট প্রকাশের ১০ বছর ধরে কাগজ-কলমে আটকে থাকা চিলাহাটি স্থলবন্দর চালুর দাবি স্থানীয়দের।

শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। তখন তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুইটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় পর শেখ হাসিনা রংপুরে আসছেন। দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, তিনি রংপুর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করবেন।

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে সরকার ২০১৭ সালে উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় শুরুই হয়নি এ প্রকল্পের কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরের জনসভার মাধ্যমে সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পাওয়ার স্বপ্ন দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়ার আশা দেখছে উত্তরের মানুষ।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর- পূর্বের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে বহুমুখী যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে বাংলাদেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে এ তথ্য জানান। সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ মাস্টারপ্ল্যান করে বিমানবন্দরের আশপাশের ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে। এজন্য জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা (এল এ) ২০১৯ সালের ১১ জুলাই জরিপ সম্পন্ন করে। অধিগ্রহণের জন্য সরকার প্রাথমিকভাবে ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সেই টাকা না পাওয়ায় কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বিমানবন্দর সংলগ্ন জমির মালিক আতাউর রহমান বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ দিয়েছে প্রায় চার বছর আগে। কিন্তু এখনও টাকা পাইনি। সরকার টাকা দিচ্ছে না, অন্য কোথাও জমি বিক্রি করতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, তিনি যেন দ্রুত আমাদের এ সমস্যার সমাধান করেন।

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, তাই আশা করি অবশ্যই এটি বাস্তবায়ন হবে। তবে এটি একটি মেগা প্রকল্প, এখানে অনেক অর্থের ব্যাপার আছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা সংকটের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হলে বাণিজ্যে পিছিয়ে থাকা এই এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। তাই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ ঢাকা পোস্টকে জানান, বিমানবন্দর উন্নয়নের অংশ হিসেবে দৃষ্টিনন্দন অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবন নির্মাণ প্রায় সমাপ্তির পর্যায়ে। এর ফলে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বর্তমানের ২০০ জনের স্থলে ৬২০ জন হবে।

চিলাহাটি স্থলবন্দর চালুর দাবি

ব্রিটিশ আমলে প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত ছিল নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি। সেসময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে অনেক প্রতিষ্ঠানসহ গড়ে ওঠে শুল্ক স্টেশন ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। তবে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় এখানকার শুল্ক স্টেশন। ২০০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় চেকপোস্টটিও।

এরপর বিভিন্ন সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সব শ্রেণিপেশার মানুষের দাবিতে ২০১৩ সালে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে চিলাহাটি স্থলবন্দরের গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু ১০ বছরেও কাগজ-কলমেই আটকে আছে উত্তরবঙ্গের সমৃদ্ধ চিলাহাটি স্থলবন্দর চালুর কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের জনসভার মাধ্যমে চিলাহাটি স্থলবন্দর দ্রুত চালুর দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মানুষের দাবি, বন্দরটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে সঙ্গে আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ বদলে যাবে এ অঞ্চলের জীবনমান। স্থলবন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি থাকা অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা বাড়বে। এছাড়া সার্কভুক্ত ভুটান, নেপাল আর চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন এক মাত্রা। ঘুচবে বেকারত্ব। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ফলে দেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এতে দ্রুত পাল্টে যাবে উত্তরাঞ্চলের চিত্র।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহাজান আলী বলেন, শুধু শুনি স্থলবন্দর চালু হবে। কিন্তু চালু আর হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে আসতেছেন, জনসভা করবেন। শেখ হাসিনার আমলে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। উনার কাছে একটাই দাবি, স্থলবন্দরটা যেন চালু করে দেন।

আতিকুর রহমান নামের আরেকজন বলেন, বন্দরটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান বদলে যাবে। আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি নীলফামারীকে নতুন করে চিনবে মানুষ। এটা আমাদের প্রাণের দাবি।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সফিকুল ইসলাম ডাবলু বলেন, চিলাহাটি স্থলবন্দর চালুর জন্য আমরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ২০১৩ সালে গেজেট হলো, আমরাও স্বপ্ন দেখলাম শিগগিরই চালু হবে কিন্তু প্রায় এক যুগ চলে যাচ্ছে এর কোনো পদক্ষেপ নেই। কবে হবে তা জানি না। তবে যদি চালু হয় তাহলে এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ ঘুচবে। আমাদের ইপিজেডসহ এ অঞ্চলের কলকারখানায় মালামাল আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, চিলাহাটি একটি সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক স্থান। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালে চিলাহাটি স্থলবন্দরের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকে এর কার্যক্রম আর সেভাবে এগোয়নি। আমরা এরই মধ্যে আরও একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। যাতে স্থলবন্দরটি সম্পূর্ণ চালু হয়।

তিনি আরও বলেন, যদি স্থলবন্দরটি সম্পূর্ণ চালু হয়, এ অঞ্চলে উন্নয়ন ঘটবে। একইসঙ্গে নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের অন্য জেলাও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে এ এলাকার জীবনযাত্রায় একটি বড় পরিবর্তন আসবে।

নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশ ইতিহাস হয়ে থাকবে। সমাবেশে নীলফামারী থেকে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক বলেন, নীলফামারীর ছয় উপজেলা, চারটি পৌরসভা ও ৬০টি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশে প্রতিটি ইউনিট থেকে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন। আমরা মনে করি ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নেবেন সেখানে। এছাড়া হাজার হাজার মোটরসাইকেলযোগে অংশ নেবেন নেতা-কর্মীরা।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে মানুষের ঢল নামবে। ইতিহাস হয়ে থাকবে এই জনসভা। রংপুর অঞ্চলে বঙ্গবন্ধুকন্যা অনেক দিয়েছেন। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে মানুষ সেখানে যাবে এবং আগামী নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে এটা জানানোর জন্য উপস্থিত হবেন।