ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সহকর্মীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৬ জুলাই ২০২৩

সহকর্মীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল

প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও একই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বুধবার (৫ জুলাই) সকালে স্থানীয়রা ফুঁসে উঠে।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এতে টনক নড়ে শিক্ষা বিভাগ ও প্রশাসনের। দুপুরের মধ্যেই গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায়, মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বিকেল থেকে বুধবার (৫ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত একটি ফেসবুক পেজ থেকে চারটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করা হয়। যার মধ্যে প্রথমটি ৩ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের, দ্বিতীয়টি ৪৩ সেকেন্ডের, তৃতীয়টি ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এবং চতুর্থটি ৪৩ সেকেন্ডের। একটি ভিডিওতে দেখা যায় অফিস কক্ষের ভেতরে চেয়ারে বসা শিক্ষিকার কাছে বার বার যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ। প্রথমে তিনি কাছে যাওয়া মাত্রই পাশের একটি চেয়ার মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলেন ওই শিক্ষিকা। চেয়ার ছুঁড়ে ফেলা মাত্রই ওই শিক্ষিকাকে সজোরে থাপ্পড় মারেন আবু সাদাত শামীম আহমেদ। পরে চেয়ারটি মেঝে থেকে উঠিয়ে আবারও পূর্বের জায়গায় রাখেন তিনি এবং নিজের চেয়ারের নিচ থেকে বই তুলে টেবিলের উপরে রাখেন। তাৎক্ষণিক বইটি টেবিল থেকে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলেন ওই শিক্ষিকা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এগিয়ে এসে ওই শিক্ষিকাকে কিলঘুষি মারতে থাকেন প্রধান শিক্ষক শামীম। এর কিছুক্ষণ পর ওই শিক্ষিকাকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে মারতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে জোরপূর্বক ওই শিক্ষিকাকে জাপটে ধরে অনবরত চুম্বন করেন তিনি। অফিস কক্ষের দিকে কেউ আসছে কি না তা দেখতে প্রধান শিক্ষক মাঝেমধ্যে জানালার কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে আসছেন। তবে আরেক ভিডিওতে ভিন্ন ধরনের পোষাকে কোনো প্রকার জোরজবরদস্তি ছাড়াই দুজনকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে দেখা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এর আগেও প্রধান শিক্ষককে বেশ কয়েকবার উত্তমমধ্যম দেওয়া হয়েছে। নারী কেলেঙ্কারি ও বেশ কিছু অনিয়মের কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তাকে স্কুল থেকে ২০১৪ সালে বের করে দেন। এক বছর স্কুলের বাইরে থাকার পর কিছু লোকের সহযোগিতায় আবারও স্কুলে প্রবেশ করেন তিনি। স্কুলের সভাপতির ছত্রছায়ায় বছরের বছর অপরাধ করেও পার পেয়ে যান আবু সাদাত শামীম আহমেদ। বর্তমানে অভিভাবকরা মেয়েদের ওই স্কুলে পাঠাতে সংকোচ বোধ করছেন। এতে ওই বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান স্থানীয়রা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠিয়ে ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদের চারিত্রিক সমস্যা দীর্ঘদিনের। এর আগে এক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় সকলের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সম্পর্কে জানার পর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে নিয়ে বৈঠক করেছি। তারা ভিডিওটি নিজেদের নয় বলে দাবি করেছে। তবে কক্ষটি প্রধান শিক্ষকের সেটা আমি নিশ্চিত। এ বিষয়ে  শিগগিরই পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, বেগুনজোয়ার স্কুলের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি খতিয়ে দেখতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছিল। দুপুরেই সেখানে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ওই শিক্ষিকা স্বেচ্ছায় নাকি বাধ্য হয়ে এ কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে সেটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। সেখানকার শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে দ্রুত প্রধান শিক্ষককে অপসারনসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হবে।