ঢাকা,  শুক্রবার  ০৩ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

২০০ বছরের ৬ ফুটের ‘গায়েবি মসজিদ’

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

২০০ বছরের ৬ ফুটের ‘গায়েবি মসজিদ’

গায়েবি মসজিদ

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও এলাকা। এ এলাকায় কাজী খন্দকার মাজারে রয়েছে ছোট্ট একটি মসজিদ। চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি ৬ ফুট বর্গাকার মসজিদটি দেশের অন্যতম ছোট ‘গায়েবি মসজিদ’।

একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন ইমামসহ পাঁচজন। ২০০ বছর ধরে মসজিদটি টিকে আছে আপন মহিমায়। স্থানীয়দের দাবি, এই মসজিদটিকে প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার।

জানা যায়, মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৬ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট। মসজিদটির বয়স প্রায় ২০০ বছর হবে। সময়ে সময়ে সংস্কার করার ফলে এখনো মসজিদটির সৌন্দর্য্য বহাল রয়েছে।

এলাকার বয়স্করা জানিয়েছেন, প্রায় ২০০ বছর আগে ওই এলাকার মাটির নিচে কিছু ইট পাওয়া যায়। ইটের পাশেই ছোট এই মসজিদটির অবস্থান ছিল।

টিলার ওপরে মসজিদের অবস্থান থাকায় প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই এটি মসজিদ। তবে উপরিভাগের ছোট বড় গম্বুজ জানান দিচ্ছে এটি আসলে একটি মসজিদ। চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি এই মসজিদটির চার কোনায় থাকা চারটি কারুকার্য নান্দনিক পিলার আকৃষ্ট করছে দর্শনার্থীদের।

মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের মুন্সিবাজারে কাজী খন্দকার মাজারের পাশে অবস্থিত কালের সাক্ষী প্রাচীন ও ইসলামিক ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শনটি এলাকায় ‘গায়বি মসজিদ’ নামে পরিচিত। এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের ভেতরে রয়েছে একটি মাত্র কক্ষ। ভেতরে জায়গা রয়েছে মাত্র ছয় ফুট। তবে এখন আর নামাজ আদায় করা হয় না এই মসজিদে।

ওই এলাকার কামরান আহমদ বলেন, পূর্বপুরুষরা বলে গেছেন গভীর অরণ্য ছিল এলাকায়। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে বনজঙ্গল আবাদের সময় মাটির নিচে এই মসজিদ পাওয়া যায়। এর পর কালে কালে সংস্কার করা হয়। কে কখন এটি নির্মাণ করেছেন তার সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে এটা প্রাচীনতম স্থাপত্য, দেশের অন্যতম সবচেয়ে ছোট মসজিদ।

এই মসজিদ নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ আছে। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তালিকায় নেই মসজিদটি। মসজিদটিকে সংরক্ষণ করে প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ভালো হতো।

স্থানীয় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ছাতির মিয়া বলেন, ‘মসজিদের ভেতরে ইমামসহ পাঁচজন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারতেন। পরে লোকজন বেশি হওয়ায় পাশে আরেকটি মসজিদ তৈরি করেন এলাকাবাসী।’

কাজী খন্দকার মাজারের খাদিম আছকির মিয়া বলেন, ‘আমাদের দাদা ও তার পূর্ব পুরুষরাও বলতে পারেননি আসলে কতদিন আগে এই মসজিদ নির্মাণ হয়েছে। দাদার কাছে জেনেছি, তিনিও নাকি শুনেছেন ২০০ বছরের পুরোনো হবে মসজিদটি। মসজিদটি দেখার জন্য অনেক সময় লোকজন আসেন। মাঝে মাঝে রাত্রি বেলা অনেকে এসে এখানে নামাজ পড়েন।’

মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলী বলেন, ধারণা করা হয় গৌড়জনপদের মধ্যযুগের স্থাপনা এই মসজিদ। তখন এই অঞ্চলে মুসলিমদের সংখ্যা কম ছিল।

মাজার কমিটির সভাপতি মুন্সিবাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ছালেক মিয়া বলেন, মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করা হবে। জানামতে এখানে পাহাড় টিলা ও গভীর জঙ্গল ছিল। মাটির নিচে পাওয়া যায়  মসজিদ ও প্রচুর ইট।

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিষয়টি জেনে কি করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা করে প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।