ঢাকা,  সোমবার  ২০ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পাইলট আসিমের মায়ের আহাজারি

‘আমি ছেলেকে ছাড়া বাঁচব কী করে’

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১০ মে ২০২৪

‘আমি ছেলেকে ছাড়া বাঁচব কী করে’

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের বৈমানিক নিহত আসিম জাওয়াদ ওরফে রিফাতের মানিকগঞ্জের বাড়িতে চলছে মাতম। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মা নিলুফা আক্তার বাসার একটি কক্ষের মেঝেতে শুয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজন ও প্রতিবেশীরা সেবাযত্ন করছেন। এরই মাঝে বলে ওঠেন, ‘আমার ছেলে কোথায়? আমার ছেলেকে এনে দাও। আমি ছেলেকে ছাড়া বাঁচব কী করে।’ এরপর তিনি আবার মূর্ছা যান। 

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সন্ধ্যায় জেলা শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকার বাসায় গিয়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। নিহত বৈমানিকের বাবা আমান উল্লাহকে বাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিকেলে তিনি চট্টগ্রামে যান।

নিহত আসিম জাওয়াদ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের চিকিৎসক আমান উল্লাহর ছেলে। তাদের শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকায় একটি বহুতল ভবনে একটি ফ্ল্যাট আছে। মা নিলুফা আক্তার খানম ও বাবা আমান মানিকগঞ্জ শহরে ওই ফ্ল্যাটে থাকেন। বৈমানিক আসিম জাওয়াদের স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান রয়েছে।

২০১৬ সালে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ অন্তরা খানমকে বিয়ে করেন। তাদের আয়েজা খানম নামের ছয় বছরের এক মেয়ে এবং এক বছরের এক ছেলে রয়েছে। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকতেন তিনি।

স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদের খালাতো ভাই মো. মশিউর রহমান জানান, ছোটবেলা থেকেই জাওয়াদের স্বপ্ন ছিল বৈমানিক হবেন। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তবে অকালে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০ মার্চ ১৯৯২ সালে আসিম জাওয়াদ জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে বিএসসি (অ্যারো) পাস করেন। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন।

চাকরিকালীন তিনি দেশ-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। 

এ ছাড়া তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফায়েড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি পেশাদারি দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমানবাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমানবাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এ ছাড়া ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্ডিয়ান এয়ার অর্জন করেন।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানে আগুন লাগার পরে আসিম জাওয়াদ ও অপর একজন বৈমানিক প্যারাস্যুট দিয়ে নেমে আসেন। এ সময় কর্ণফুলী নদী থেকে তাদের উদ্ধার করে বিএনএস পতেঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মারা যান  স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ।