ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বাবা হারা আনিকার পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাবা হারা আনিকার পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক

সংগৃহিত ছবি

বাবাকে হারিয়ে মায়ের ত্যাগ আর লড়াইয়ের জীবন সংগ্রামে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে কৃতি শিক্ষার্থী আনিকা আক্তার। আর্থিক সহায়তা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শঙ্কায় ছিলেন কলেজে ভর্তি নিয়ে। এবার তার শঙ্কা দূর করে পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আনিকার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য তার মায়ের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম।

আনিকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচংয়ের কাজীমাবাদ শালকান্দি গ্রামের প্রয়াত মো. ফারুকুল ইসলামের মেয়ে। আনিকা আক্তার যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো তখন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তার বাবা। শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে ১ শতক জায়গায় জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘরে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন মা আয়েশা খাতুন।

অভাবের সংসারে মেয়ের পড়ার খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য নেই তার মায়ের। তবে সব বাধাকে পেরিয়ে নিজের চেষ্টা, স্বজন ও শিক্ষকদের সহযোগীতায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে আনিকা। ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে আনিকা। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে টাকার অভাবে পড়াশোনা চালানো নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় সে। এই খবর জেনে তার দাঁড়িয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম।

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু এই শিক্ষার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাই সেখানে পড়াশোনার খরচ তেমন হবে না। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকলে এবং মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে সে ভালো ফলাফল করতে পারবে। আমি আনিকা ও তার মাকে সহায়তা বাবদ দেওয়া টাকা পড়াশোনার জন্য খরচের পরামর্শ দিয়েছি।

আনিকা আক্তার বলেন, বাবার আদর-স্নেহ পেলেও তা মনে নেই। মা আমার সব। এক চাচি পরীক্ষার ফি জোগাড় করে দিতেন। বই কেনাসহ অন্যান্য টাকা মামা দিতেন। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না বলে সৌদিপ্রবাসী মামা আমজাদ হোসেনের বাড়িতে থেকে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। নবীনগর পৌরসভার মেয়র শিব সংকর দাস বিদ্যালয়ের বেতন ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি মওকুফ করিয়েছেন। শিক্ষকরা বিনা টাকায় পড়িয়েছেন। অসংখ্য দিন না খেয়ে কাটিয়েছি। না খেয়ে স্কুলে গিয়েছি।

আনিকা আরও বলেন, সহায়তা পেয়েছি। জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। সামনে পথটা আরও সংগ্রামের। এই সংগ্রামে যে করেই হোক জয়ী হতে হবে। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের হোস্টেলে একটি সিট পেলেই হয়। প্রয়োজনে টিউশনি করবো, তবুও পড়াশোনা চালিয়ে যাব।

আনিকার মা আয়েশা খাতুন বলেন, মেয়ের বাবা বেঁচে নেই। আমার আয়ের কোনো উৎস নেই। সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি চাই মেয়ে পড়াশোনা করে সামনে এগিয়ে যাক।