ঢাকা,  রোববার  ০৫ মে ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

...এই জঙ্গলে প্রাচীন প্রেতাত্মারা বাস করে

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

...এই জঙ্গলে প্রাচীন প্রেতাত্মারা বাস করে

...এই জঙ্গলে প্রাচীন প্রেতাত্মারা বাস করে

পৃথিবীতে রহস্যময় স্থান বা জায়গার অভাব নেই। আজও সেসব স্থানের রহস্যভেদ করতে পারেননি বিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞরা। এরকমই জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রহস্যময় অরণ্যটির নাম অওকিগাহারা। এর আয়তন প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার।

জঙ্গলে গাছের ঘনত্ব এতটাই বেশি যে একে ‘সি অব ট্রিজ্’ বা গাছেদের সমুদ্র নামেও ডাকা হয়। এখানে প্রাণের অস্থিত্ব বিশেষ মেলে না। শান্ত নিরিবিলি হওয়ায় অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী পর্যটকের কাছে এটি খুবই প্রিয় জায়গা। আর এটি আরও প্রিয় জায়গা আত্মহত্যাকারীদের কাছে।

 

ছবি: অন্তর্জাল

সমীক্ষা বলছে সুনসান এই অরণ্যে প্রায় প্রতি বছর শতাধিক জাপানি আত্মহত্যা করেন। সেই কারণেই এই জঙ্গলটির আরেক নাম ‘আত্মহত্যার অরণ্য’ বা সুইসাইডাল ফরেস্ট। বর্তমানে সেখানে পাহারার ব্যবস্থা থাকলেও বহু আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষ তাদের কার্যসিদ্ধি করতে সক্ষম হন।

জাপানিদের বিশ্বাস এই জঙ্গলে প্রাচীন প্রেতাত্মারা বাস করে। জাপানি প্রাচীন গাঁথা অনুযায়ী, উবাসু নামক এক অঞ্চলের জাতি মধ্যে অদ্ভূত এক প্রথা ছিল। পরিবারের বয়স্ক মানুষদের তারা এই অওকিগাহারার জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসতেন। সেখানে ঘুরতে ঘুরতে প্রাণ হারাতেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। তাদের প্রেতাত্মাই নাকি জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। আর সেই সব অশুভ আত্মার প্রভাবেই নাকি এই জঙ্গলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি।

এটি বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় আত্মহত্যার স্থান

সবুজ এবং সুন্দর এই অরণ্যের ভৌতিক গল্প বিশ্ব বিখ্যাত। বিশ্বের দ্বিতীয় বিখ্যাত আত্মহত্যার স্থান হিসেবে এই অরণ্যকে গণনা করা হয় (এক নম্বরে রয়েছে গোল্ডেন গেট)। টোকিও থেকে এই অরণ্যের দূরত্ব দুই ঘণ্টারও কম। অওকিগাহারা জঙ্গলে আত্মহত্যার প্রবণতা শুরু হয় ১৯৫০ সাল থেকে। ২০০২ সালে জঙ্গল থেকে উদ্ধার হযেছিল ৭৮টি মৃতদেহ। ২০০৩ সালের সংখ্যাটা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। ২০০৪ সালেও শতাধিক ব্যক্তি এই জঙ্গলে আত্মহত্যা করেছেন। যত দিন গেছে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। পরবর্তী সময়ে জাপান সরকার আত্মহত্যার হার প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়। প্রধানত গাছে ফাঁসি দিয়ে বা মাদকগ্রহণ করেই আত্মহত্যার প্রবণতা এই জঙ্গলে বেশি।

 

ছবি: অন্তর্জাল

প্রেতাত্মারা নাকি মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে

জাপানের মানুষ বিশ্বাস করেন যে, এই অরণ্যে প্রেতাত্মারা বাস করে। আর তারা এখানে আসা মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। এই বনে প্রবেশ করলেই বোর্ডে লেখা সতর্কতা চোখে পড়বে।

নিজের সন্তান ও পরিবারের কথা ভাবুন

জীবনের মতো মূল্যবান উপহার আপনার পিতা-মাতা আপনাকে দিয়েছেন। আত্যহত্যার আগে তাদের কথা, নিজের পরিবার এবং সন্তানের কথা ভাবুন। এরকমই কিছু কথা লেখা আছে অরণ্যের সাইনবোর্ডে।

এখানে একবার হারিয়ে গেলে বের হওয়া কঠিন

কুয়াশা ঘেরা ঘন জঙ্গলের পায়ের নিচে কোথাও পচা পাতা, কোথাও আবার শুকনা। পূর্ণিমার চাঁদ উঠলে তাও চারদিকটা আবছাভাবে ঠাওর করা যায়। কিন্তু অমাবস্যা তিথিতে এই জঙ্গল ভয়ঙ্কর। দেশের লোকে বলে এই জঙ্গল তারা থাকেন। এই জঙ্গলে একবার প্রবেশ করলে নাকি মনে হয় ভুলভুলাইয়ায় ঢুকে গেছেন। ১৯৬০ সালে সাইকো মাটসুমোটো নামক এক জাপানি লেখক ‘টাওয়ার অব ওয়েবস’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। বলা হয়, সেই উপন্যাস প্রকাশের পর থেকেই অওকিগাহারার অরণ্যে আত্মাহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই উপন্যাসের দুইটি চরিত্র এই বনে গিয়ে আত্মহত্যা করেছিল।

 

ছবি: অন্তর্জাল

বনের ঘনত্বের কারণে এটি ঘটে

অলৌকিকতার কথা বাদ দিলেও এখানকার প্রাকৃতির রহস্যও কম আকর্ষণীয় নয়। জঙ্গলটির মেঝে পুরোপুরি আগ্নেয়শিলায় তৈরি। ফলে এখানে পাথর খুঁড়ে রাস্তা তৈরি করা একরকম অসম্ভব। বনের ভেতরে অবশ্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ চালানোর মতো রাস্তা তৈরি করে নিয়েছেন। এই রাস্তা দিয়ে মৃতদেহ সংগ্রহ করা হয়। জঙ্গলে যাতে পথ হারিয়ে না যায় সেজন্য প্লাস্টিকের টেপ দিয়ে পথনির্দেশিকা রাখেন পর্যটকরা। যদি বনের গভীরতার প্রথম এক কিলোমিটারের মধ্যেই শুধুমাত্র এই পথ নির্দেশিকার চিহ্ন মিলবে। কিন্তু মজার কথা হল পর্যটকরা নিজেদের সুবিধার জন্য এই পথনির্দেশিকা লাগালেও জাপান সরকারের কর্মীরা সেগুলিকে সাবধানতাবশে প্রতিবারই খুলে ফেলেন। তাঁদের যুক্তি, এই সব পথনির্দেশিকা আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের জঙ্গলে ঢুকতে উৎসাহ দেয়। জঙ্গলে পা রাখলেই মনে হবে আপনি যেন সমস্ত সভ্যতাকে পিছনে ফেলে আদিমযুগে পদার্পণ করেছেন। জঙ্গলের বয়স তিনশোরও বেশি। জঙ্গলে প্রবেশ করলে মোবাইল ফোন, কম্পাস সব কাজ করা বন্ধ করে দেয়। জঙ্গলের আশপাশের লোকজন নাকি রাতে চিৎকারের শব্দ শুনতে পান।

তথ্যসূত্র: এই সময়