ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বিলুপ্তপ্রায় ‘সালাতুদ্ দুহা’ নামাজ

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ২৬ জুন ২০২০

বিলুপ্তপ্রায় ‘সালাতুদ্ দুহা’ নামাজ

আমরা দিনে দিনে যতটা আধুনিকতার দিকে এগিয়ে চলছি ইবাদতের দিক থেকেও ঠিক ততোটাই পিছিয়ে পরছি। ফলে রাসূল(সাঃ) এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল থেকে হচ্ছি বঞ্চিত এবং এর ফলে আমাদের জীবন থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে রাসূল(সাঃ) এর অসংখ্য সুন্নাহ্। আজ এমন একটি সালাত নিয়ে আলোচনা করবো যেটি নফল সালাতে দিক থেকে “ক্বিয়ামুল লাইল” (তাহাজ্জুদের সালাত) এর পর ২য় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি নফল সালাত।

বলছি বিলুপ্তপ্রায় একটি সালাত “সালাতুদ্ দুহা” বা “চাশতের নামাজের” কথা। এই সালাত(সালাতুদ্ দুহা) এতোটাই ফজিলতপূর্ন যে রাসূল (সাঃ) থেকে অসংখ্য সহীহ হাদিস পওয়া যায় এই সালাত নিয়ে। নিচে এই সালাতের(সালাতুদ্ দুহা) অর্থ, আদায়ের সময়, আদয়ের নিয়ম এবং সর্বশেষ এর ফজিলত নিয়ে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ।

মূলত ‘দুহা’ শব্দটির ফারসি প্রতিশব্দ হলো ‘চাশত’ এবং এর বাংলা করলে দাড়ায় ‘পূর্বাহ্ন’। সুতরাং,যেই সালাত সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্বেই আদায় করা হয় সেই সালাতকে ‘সালাতুদ্ দুহা’ বা ‘চাশতের সালাত’ বলা হয়।

‘সালাতুদ্ দুহা’ আদায়ের উপযুক্ত সময়ঃ

রাসূল(সাঃ) বলেছেনঃ “এই সালাত (চাশতের সালাত) আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে তখন, যখন সূর্যের তাপ এতোটা প্রখোর যে, সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক উট ও সেই তাপ অনুভব করতে পারে।” [সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-১৬৩০]

শাইখ ইবন ঊসাইমিন (রহঃ) এর মতেঃ

“চাশতের সালাত আদায়ের সময় হলো সূর্য উঠার ১৫ মিনিট পর থেকে যোহার সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার ১০ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত।” [আল-শারহ্ আল-মুমতিঃ৪/১১২]

অথ্যাৎ,”এই সালাত আদায়ের সময় হলো সূর্য উদয়ের সময় হতে যোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত।”

‘সালাতুদ্ দুহা’ আদায়ের নিয়মঃ

‘চাশতের সালাতের’ রাকাতের সংখ্যাঃ ২,৪,৮,১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়।

রাসূল (সাঃ) আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানী (রাঃ) এর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবো ৮ রাকাত আদায় করেছিলেন এবং প্রতি ২ রাকাত অন্তর সালাম ফিরিয়েছিলেন।

‘সালাতুদ্ দুহা’ আদায়ের ফজিলতঃ

বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্নিতঃ

রাসূল (সাঃ) বলেছেন- “মানুষের শরীরে ৩৬০ টি জোড়া রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সদাকা করা। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বললেন ” ইয়া রাসুলুল্লাহ! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?” তিনি (সাঃ) বললেন- মসজিদে কোথাও থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোন ক্ষতিকর কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে চাশতের ২ রাকাত সালাতই এর জন্য যথেষ্ট।” [আবু দাউদ,হাদীস নং-৫২২২]

অথ্যাৎ, উপরোক্ত হাদিসটি থেকে বুঝা যায় এই সালাত (চাশতের সালাত) এতটাই ফজিলতপূর্ণ যে এটি ৩৬০ টি সদাকার সমতুল্য।(সুবহানাল্লাহ)

আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ

“আমার বন্ধু (মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাকে ৩ টি বিষয়ে আমল করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন- প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, চাশতের সালাত আদায় করা এবং ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে বিতরের সালাত আদায় করা।” [সহীহ বুখারী,হাদীস নং-২৭৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৫৬০]

উপরোক্ত হাদিস থেকে উল্লেখ্য যে, রাসূল (সাঃ) তার সাহাবাকে এই সালাত(চাশতের সালাত) আদায় করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন, এর দ্বারা বুঝা যায় যে এই সালাত আমাদের জন্য কতটা ফজিলতপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা এই সালাত জীবনে একবারও আদায় করিনি এমনকি অনেকে কোন ধারনাই রাখি না এই সালাতটি সম্পর্কে।

“আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আমাদের সবাইকে রাসূল (সাঃ) এর সকল সুন্নত সমূহকে আকড়ে ধরে জীবন-যাপন করার তৌফিক দান করুক।”

“আমীন”।

গাজীপুর কথা