ঢাকা,  মঙ্গলবার  ৩০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্য

প্রকাশিত: ০১:১৬, ২১ অক্টোবর ২০২৩

মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্য

সংগৃহীত ছবি

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। মানুষ সদা সর্বদা তার সৃষ্টিকর্তার কথা স্মরণ করবে। তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে, কৃতজ্ঞতা জানাবে এ জন্য। অধিক পরিমাণ ইবাদত কিংবা আল্লাহর জিকিরে মানবের কল্যাণ নিহত। উত্তম মানব হওয়ার যোগ্যতা নিশ্চিত করে বান্দার আল্লাহ প্রেম।

আবদুল্লাহ ইবনে বুস্র (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক বেদুইন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, কোন প্রকারের মানুষ উত্তম? তিনি বলেন, সুসংবাদ তার জন্য যে দীর্ঘ জীবন লাভ করেছে এবং যার মধ্যে (এই দীর্ঘ জীবনে) ভালো কাজের সমারোহ হয়েছে। সে পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসুল! কোন ধরনের কাজ সর্বোত্তম। তিনি বলেন, তুমি দুনিয়া থেকে এমন অবস্থায় বিদায় নেবে (মৃত্যুবরণ করবে) যখন তোমার জিহ্বা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত থাকবে। (ইমাম আহমাদের মুসনাদ ও তিরমিযি থেকে মিশকাতে)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো স্থানে বসল অথচ আল্লাহর নাম স্মরণ করল না, আল্লাহর হুকুমে এ বৈঠক তার জন্য ক্ষতিকর কারণ হবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি কোনো বিছানায় শয়ন করল অথচ আল্লাহর নাম স্মরণ করল না, আল্লাহর হুকুমে এ শয়ন তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে (আবু দাউদ থেকে মিশকাতে)।
মানুষ যখন আল্লাহর নাম স্মরণ করে তখন যে শয়তানের খপ্পর থেকে মুক্ত থাকে। পাপ থেকে সে দূরে থাকতে পারে। কৃতজ্ঞ হিসেবে সে বিবেচিত হয় আল্লাহর কাছে। সে কারণে ইসলামের মহানবী (সা.) সব সময় তার উম্মতদের আল্লাহকে স্মরণ করতে বলেছেন।

 

সত্য ও ন্যায়ের বাণী প্রচার হলো বড় ইবাদত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে উম্মতে মুহাম্মদি। তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হওয়া উচিত যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে আর তারাই হলো কল্যাণ ও সৌভাগ্যের অধিকারী। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ দীন ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং শরিয়তের অপরিহার্য দায়িত্বগুলোর মধ্যে এক বিরাট দায়িত্ব। আল্লাহর অহি অনুযায়ী তাঁর নবী ও রসুলগণই হলেন সৎ কাজের আদেশদাতা এবং অসৎ কাজে নিষেধদাতা। আর ওলামায়ে কেরাম হলেন এ ব্যাপারে তাঁদের উত্তরাধিকারী। যারা শক্তি ও সাধ্যানুযায়ী দীনি জ্ঞানবিদ্যা সব মানুষের কাছে প্রচার করবেন এবং তাদের নেক আমলের প্রতি উৎসাহিত করবেন। 

এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ সম্পর্কে আমর বিন শুয়াইব তার পিতা শুয়াইব থেকে এবং তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন; হজরত রসুল পাক (সা.) বলেন- ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের নামাজের আদেশ কর যখন তারা সাত বছরে পৌঁছে। (আবু দাউদ শরিফ) হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হজরত রসুল পাক (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো মন্দ আচরণ দেখতে পায় সে যেন স্বহস্তে তা দূরীভূত করে। যদি সে তাতে শক্তি না রাখে তাহলে সে যেন জবান দ্বারা তা দূর করে দেয়। তাও যদি তার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে সে যেন তা মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। আর এটা হলো দুর্বল ঈমানের পরিচয়।’ (মুসলিম শরিফ)

হজরত হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত হুজুর (সা.) বলেন, ‘কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে। অন্যথায় শিগগিরই আল্লাহপাক তোমাদের প্রতি তাঁর শাস্তি প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা মুক্তির জন্য দোয়া করবে বটে, কিন্তু দোয়া কবুল করা হবে না।’ (তিরমিজি শরিফ)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হুজুর (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি মানুষকে কোনো নেক আমলের দিকে আহ্বান করবে, সে ওইসব লোকের সমান সওয়াব পাবে যারা এর অনুসরণ করবে। অথচ ইহা আমলকারীদের সওয়াবের কোনো অংশ কমাবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কাউকে কোনো গোমরাহি তথা অন্যায় কাজের দিকে আহ্বান করবে তার জন্যও ওই পরিমাণ গুনাহ হবে যা এর অনুসারীদের জন্য হবে। অথচ তাদের গুনাহের কোনো অংশ কমাবে না।’ মুসলিম শরিফ

হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলে পাক (সা.) বলেন- ‘আল্লাহপাক হজরত জিব্রাইল (আ.)-কে অমুক অমুক শহর তার অধিবাসীসহ উল্টে দেওয়ার হুকুম করলেন। হজরত জিব্রাইল (আ.) বললেন, হে রব! তাদের মধ্যে আপনার এমন একজন বান্দা রয়েছে যে জীবনভর এক নিমিষের জন্যও আপনার নাফরমানি করেননি। আল্লাহপাক বললেন, তুমি তাকেসহ তাদের ওপর এলাকা উল্টে দিয়ে ধ্বংস কর। কেননা সে এমন এক স্বার্থপর বান্দা যার চেহারা এলাকাবাসীর নাফরমানির দরুন কখনো বিবর্ণ ও মলিন হয়নি।’ বায়হাকি শরিফ

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার মহান দায়িত্ব পালন করতে পারি। আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক