ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গাজীপুরে এবার অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ১০ জুলাই ২০২০

গাজীপুরে এবার অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির ব্যবস্থা

করোনা মহামারির এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে গাজীপুরে এখনও পশুর হাট বসতে শুরু করেনি। এ সংকট মোকাবিলায় এবার অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।

জেলা প্রশাসন থেকেও জেলার পাঁচটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ডেইরি মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতার উপস্থিতি অনেকাংশেই কমে যাবে বলে ধারণা করছে জেলা প্রশাসন।

পশুর যথাযথ মূল্য পাবে কিনা তা নিয়েও আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

গাজীপুর সদর উপজেলার দরগাচালা গ্রামের খামারি খবির হোসেন বলেন, ‘এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ৪৫টি গবাদি পশু বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছি। ক্রেতারা খামারে আসবে কিনা বা ক্রেতাদের কাছে কীভাবে কোরবানির পশুর তথ্য পৌঁছানো যায় তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। করোনার এ সময়ে পশুর যথাযথ মূল্য পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে।’

সদর উপজেলার বানিয়ারচালা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতি ঈদুল আজহায় ৩৫ থেকে ৪০টি গরু কোরবানির জন্যে মোটাতাজা করি। এবার খামারে ৩৫টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। অন্যান্য সময় হাট-বাজারে গরু নিয়ে যেতাম। এ বছর এখনও গরুর হাট বসতে শুরু করেনি। এ অবস্থায় কী করবো তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

ইতোমধ্যে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গবাদি পশুর তালিকা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকার গ্রিন অ্যাগ্রো পার্কের ব্যবস্থাপক মো. সুমন পাটোয়ারী বলেন, ‘এবার গরু ক্রেতাদের জন্য খামারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। কেউ গরু পছন্দ করার জন্য সময় নিয়ে থেকে-খেয়ে গরু কিনতে করতে পারবেন।’

‘এছাড়াও, অনলাইনে গরু বিক্রিরও উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পশুর ছবি আপলোড করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবার ১২০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছি,’ যোগ করেন তিনি।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গবাদিপশুর ওজন পরিমাপ, মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম তরিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো গবাদি পশুর বাজার জমবে কিনা তা নিয়ে বিক্রেতাদের শঙ্কার সংবাদ আমাদের কাছে রয়েছে। এ অবস্থা মোকাবিলা করতে আমরা অনলাইন প্ল্যাটফরমে পশু বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

‘এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গবাদি পশুর খামারিদের যেসব সংগঠন রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।’

তিনি জানান, অনলাইনে বিক্রির জন্য প্ল্যাটফরম রেডি আছে। এতে পশুর ওজন অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হবে, যেন ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ প্রতারিত না হয়।

‘করোনার সংক্রমণরোধে স্থানীয় বাজারগুলোয় নজরদারি করতে এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। যেসব বাজারে পশু বিক্রি হবে, তারা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার পরিচালনা করবেন। অন্যথায় সেসব বাজার বন্ধ করে দেওয়া হবে,’ যোগ করেন তিনি।

গাজীপুর জেলা মার্কেটিং বিভাগ ও সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চার শতাধিক বাজার রয়েছে। পাঁচটি উপজেলায় রয়েছে প্রায় অর্ধশত স্থায়ী বাজার। এসব বাজারে সপ্তাহে একদিন করে গবাদি পশুর হাট বসে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গাজীপুর ও টঙ্গীতে বিশেষ ১০টি অস্থায়ী হাট বসবে।

গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দিপক রঞ্জন রায় বলেন, ‘জেলায় মোট খামারির সংখ্যা ৬ হাজার ৮৬৮ জন। তারা ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যেই গবাদি পশু বিক্রির উপযোগী করে তুলেছেন। এর মধ্যে গরু ৬১ হাজার ১৫০টি, মহিষ ৪০ হাজার ৬৩৫টি এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ২০ হাজার ৯১৫টি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার করোনা সংক্রমণের কারণে ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখে খোলা জায়গায় হাট স্থাপন করতে হবে। তা না হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না।’

গাজীপুর কথা