ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

খাঁচায় মাছ চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন বাপ্পী

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

খাঁচায় মাছ চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন বাপ্পী

করোনাভাইরাসের প্রভাবে যখন সারাবিশ্ব স্তব্ধ, মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে বাড়ছে অনিশ্চয়তা। ঠিক তখনই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটছেন রাঙামাটির বাপ্পী তনচংগ্যা। কাপ্তাই হ্রদে ভাসমান খাঁচায় শুরু করেছেন মাছ চাষ। এতে করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছে বিএফআরআই। খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোক্তা সৃষ্টির ফলে স্থানীয় বেকার যুবকরাও কাজ পেয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার অদূরে সদর উপজেলার মানিকছড়ি পাড়ামুখ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের পানিতে খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষ শুরু করেন বাপ্পী তনচংগ্যা। চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরুতে তিনি হ্রদে ভাসমান ৩২টি খাঁচায় ৫৩ হাজার মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের পোনা ছাড়েন। এতে তার এককালীন বিনিয়োগ করতে হয়েছে সাড়ে চারলাখ টাকা। এছাড়া মৌসুমভিত্তিক বিনিয়োগ করতে হবে আরো ৭ লাখ টাকা। সব ঠিক থাকলে প্রত্যাশা এ মৌসুমে তার উৎপাদিত মাছের মূল্য হবে ১৫ লাখ টাকা। এতে যাবতীয় ব্যয় মিটিয়ে ৬-৭ লাখ টাকা লাভবান হতে পারবেন।

তরুণ উদ্যোক্তা মৎস্য চাষি বাপ্পী তনচংগ্যা বলেন, আমি সফলতা পেলে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিধি আরো বাড়াব, এতে করে স্থানীয় বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হবে। এখান থেকে শিখে তারা নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। আমি চাই আমাদের এই কাপ্তাই হ্রদকে ব্যবহার করে স্থানীয় বেকার যুবকরা চাকরির পেছনে না ছুটে আমার মতো উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন।

বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত এখানে দুই ধরনের বিনিয়োগ করতে হয়। প্রথমত বাঁশ, ড্রাম, খাঁচা, রশি জালসহ এককালীন বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া মৌসুম হিসেবে পোনা ছাড়া থেকে উৎপাদন পর্যন্ত আরেকটি বিনিয়োগ রয়েছে। আমি প্রথমধাপে ৩২টি খাঁচায় ৫৩ হাজার মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের পোনা ছেড়েছি। পোনা ছাড়া থেকে খাদ্য সরবরাহসহ প্রতিটি মৌসুমে আমার সাত লাখ টাকার মতো খরচ হবে। তবে বাজারে মাছের উপযোগী মূল্য পেলে আমি এ মাছ প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারব। সে হিসেবে আমার প্রতিটি মৌসুমে ৬-৭ মুনাফা লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাছ ঘেরে কর্মরত শ্রমিক কালায়ন তনচংগ্যা বলেন, আগে আমি বেকার ছিলাম। এখন মৎস্য ঘেরটি চালুর পর থেকেই এখানে মাসিক বেতনে কাজ করছি। শুরু করেই আমি ঘেরের দেখাশোনা করছি। প্রতিদিন ঘেরের খাঁচায় চারবার মাছকে খাদ্য দিতে হয়। এছাড়া পরিচর্যাসহ অন্যান্য কাজ করি। খাঁচায় মাছ চাষের কারণে মালিক নিজে লাভবান হবেন। আমি নিজেও মাসিক যে টাকা বেতন পাচ্ছি, তাতে ঘর-সংসার ভালোভাবে কেটে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙামাটি নদী উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আজহার আলী বলেন, কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়াতে খাঁচায় মাছ চাষ অত্যন্ত জরুরি। এতে করে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও বেকার যুবকেরা সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারবেন। এটি খুবই সহজ পদ্ধতি, কিছু মূলধন হলেই আমরা এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারি। প্রথমেই চাষ উপযোগী খাঁচা তৈরি করে নিতে হবে এবং ভালো মানের পোনা ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পর পর্যাপ্ত খাবার ও পরিচর্যা করলে ১২০ দিনের মধ্যেই মাছ বিক্রির জন্য বাজারজাত করা যাবে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন