ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

করোনা প্রতিরোধে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা যে পরামর্শ দিলেন

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১০ এপ্রিল ২০২১

করোনা প্রতিরোধে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা যে পরামর্শ দিলেন

দেশে প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এমন অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন দিলে হয়তো সংক্রমণ কিছুটা কমবে। তবে বারবার লকডাউন দিলে হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মরে যাবে। লকডাউন দেয়ার একটাই কারণ ছিল যাতে ভাইরাসটি ধীরে ছড়ায় এবং এ সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর ৭০০ কোটির সবার হাতে হাতে এই ভ্যাক্সিন পৌছাতে কম করে হলেও ৩-৪ বছর সময় লাগবে। তাই চীন, ইতালিসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেছেন, এক যুগে ‘ডাইনোসর’ ছিল, কিন্তু প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারেনি বলে তারা আজ নেই। অথচ সেই জুরাসিক যুগের ‘তেলাপোকা’ এখনো টিকে আছে। কারণ সে নিজেকে বিবর্তন করে, নিজেকে চেঞ্জ করে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পেরেছে। ম্যামথও ছিল তখন, হয়ত ’ম্যামথ’ তার রূপ চেঞ্জ করেই বর্তমানের হাতি হয়েছে। এগুলোই বিবর্তন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এটা একদমই প্রাকৃতিক ব্যাপার। প্রতিটা যুগে যুগে এমন বিবর্তন হয়েছে।

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, আমাদেরও প্রকৃতির উপাদানের সঙ্গে বিবর্তিত হতে হবে। লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। আমাদের নিজেদেরও পরিবর্তন হতে হবে। কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই টিকে থাকা সম্ভব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কীভাবে খাপ খাইয়ে সামনে টিকে থাকা যায় সে বিষয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে তার দেয়া কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো নিচে-

অভ্যাস : বাজে অভ্যাসগুলা ত্যাগ করতে হবে। কথায় কথায় মুখে আঙুল দেয়া, কলমের মুখ কামড়ানো, আঙুল জিব্বায় লাগিয়ে কাগজ উল্টানো, থুতু দিয়ে টাকা গোনা ইত্যাদি যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সঙ্গে মাস্ক পড়তে হবে এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ২০০৩-এ জাপানে সার্স ভাইরাসের মহামারির পর তাদের মধ্যে এই অভ্যাসগুলো গড়ে উঠেছিল, যা আজ খুব ভাল কাজ করছে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে। ধূমপান যথাসম্ভব পরিহার করা।

পরিবেশ (এনভাইরনমেন্ট) : আমরা খুব ভাগ্যবান যে আমরা এমন পরিবেশে আছি। নয়ত এই ঘনবসতি দেশ কবেই শেষ হয়ে যেত। আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা খুব ভাল কাজ করছে। আর্দ্রতা বেশি থাকা মানে বাতাসে ধুলাবালি কম উড়বে। শীতে আর্দ্রতা কম থাকে, চারদিক শুষ্ক থাকে বলে বেশি ধুলা ওড়ে। এজন্য শীত প্রধান দেশে এই ভাইরাস বেশি হানা দিচ্ছে। তাই ঠান্ডা এসি পরিহার করতে হবে, এসি রুমের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়।

ইমিউনিটি : এটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই পুরো পোস্ট লেখার পেছনে এই পয়েন্টটাই দায়ী। হার্ড-ইমিউনিটির বিকল্প নেই। আমাদের ইমিউনিটি বুস্ট করতেই হবে। সেটা কিভাবে?

ফিজিক্যালি এন্ড মেন্টালি :
ফিজিক্যালি :

নিয়ম মাফিক ঘুমাতে হবে। শরীর ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য রাত জাগা খুব খারাপ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে, প্রায় ১৫-৩০ মিনিট। মাসল এক্টিভিটি বাড়াতে হবে।
প্রায়ই রোদে ঘুরতে হবে ছাদে। রোদ দরকার, ভিটামিন-ডি লাগবেই লাগবে।

খাবার :

ভাতে কোনো ঘোড়ার আন্ডার পুষ্টিও নাই, উল্টা অতিরিক্ত ভাত খেলে আপনি মোটা হবেন। ভাত কম খেয়ে তরকারি এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।
প্রচুর পানি খেতে হবে (এটা খুব বাজে অভ্যাস আমরা পানি খেতে চাই না)।
এন্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার খেতে হবে। শাক-সবজি খেতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রোটেকশন নিয়ে বাজারে যান, নয়ত ইমিউনিটির অভাবে এমনিই মরতে হবে।
ভিটামিন-সি বা টক যুক্ত ফল, কমলা, লেবু খেতে হবে। এছাড়াও সিজনাল ফল খেতে হবে। প্রতিদিন সকালে লেবু সিদ্ধ গরম পানি খান।
ফাস্ট ফুড টোটালি অফ, চিনি কিংবা লবণ খাওয়াও কমাতে হবে।
আমাদের দেশের মসলাগুলো দারুন কাজের। লং, লবঙ্গ, জিরা, হলুদ, দারুচিনি এইগুলো মারাত্মকভাবে ইমিউনিটি বুস্ট করে। দুধে হলুদ মিশিয়ে খাবেন, হলুদ অনেক কাজের। চায়ে মসলা মিশিয়ে খাবেন। গ্রিন-টি (এন্টি-অক্সিডেন্ট) বেস্ট, গ্রিন-টি’তে এই মসলাগুলো খেলে অনেক ভালো।

কালিজিরা কার্যকরী একটা উপাদান। প্রতিদিন সকাল বেলা উঠে এক চামচ মধুর সঙ্গে কালিজিরা অনেক বেটার একটা কম্বিনেশন। এছাড়া কালিজিরা ভর্তা বা ভাজি খাবারের সঙ্গে খেতে পারেন।

গাজীপুর কথা