ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আষাঢ়ে গল্প

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ১৭ জুন ২০২০

আষাঢ়ে গল্প

আষাঢ়ে গল্প বাঙালি জীবনে বহুল ব্যবহৃত একটি প্রবাদ। এই প্রবাদটি মূলত ব্যবহার হয় কল্পনামূলক আজব বা অবাস্তব গল্প বোঝাতে যা বাস্তবে কোনোভাবে ঘটা সম্ভব না।

প্রবাদটির উৎস সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় – সংসদ বাংলা অভিধানে বলা হয়েছে আষাঢ়ে মানে অদ্ভুত, মিথ্যা, অলীক। সংস্কৃত ‘আষাঢ়’ শব্দের সঙ্গে বাংলা ‘ইয়া’ প্রত্যয় যোগে আষাঢ়িয়া, এবং তারপরে আষাঢ়িয়া থেকে আষাঢ়ে শব্দটি এসেছে। আষাঢ় মাসের অলস মুহূর্তের গল্পের আসর থেকেই  আমাদের দেশে ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে এমনটা মনে করা যেতেই পারে।

পাবনা জেলার চাটিমোহর উপজেলার হরিপুরের সন্তান প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৩৯) বিচিত্র পত্রিকায় “বর্ষার দিন” প্রবন্ধে ( ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ ; ভাদ্র মাস : কলকাতা) এই বিষয়ে কিছু কথা উল্লেখ করেছেন; বাঙাল দেশের লোকেরা আষাঢ়ে গল্প কে আজাড়ে গল্প বলে থাকেন । এই আজাড় শব্দের সন্ধান সংস্কৃতকোষে পাওয়া যায় না, এতদ্বারা অনুমান করা যায় এর উৎপত্তি হয় ফারসি নয় আরবি শব্দভান্ডার৷ বাঙালিরা প্রায়শই বলে থাকে ‘উজাড় করে দেওয়া’ অর্থাৎ নির্মূল করা৷ ‘জড়’ মানে  মূল তা বাংলার চাষীরা জানে৷ সুতরাং আজাড়ে গল্পের অর্থ অবাস্তব গল্প তা সহজেই বোঝা যায়। এই আজাড় শব্দকে বাঙালিরাই শুদ্ধি করে আষাঢ় বানিয়েছে৷ এই কারণেই আরব্য উপন্যাসে যত গল্প পাওয়া যায়, সব গল্পই আষাঢ়ে গল্প৷

এতো গেল প্রমথ বাবুর বক্তব্য। এবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক শব্দের বিন্যাসগত দিকটিতে। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধানে ‘আজাড়’ শব্দের অর্থ- ‘অবসর’ বা ‘ফুরসত’ বোঝায়। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ( ১৮৮৫-১৯৬৯) সম্পাদিত বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষা অভিধানে ‘আজ্যাইড়া’, ‘আজাড়া’ (আজাড়ে অর্থ অবিশ্বাস্য), অদ্ভুত, অমূলক, অহেতুক ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার আছে।একথা মনে করা হয় ফারসি অভিধান অনুসারে ‘আযার’ বা ‘আজার’ ( আলিফ + যা + আলিফ + রা) শব্দ থেকে ‘আজুরে’ বা ‘আজাড়ে’ শব্দ এসেছে, যার অর্থ অত্যাধিক৷

বিশ্বসাহিত্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আষাঢ়ে গল্পের উদাহরণ হিসেবে মনে করা যেতে পারে  ‘ব্যারন মুনশাউজেন’ (Baron Munchausen)কে।রুশ-তুরস্ক যুদ্ধের পটভূমিতে সৈনিক ব্যারন মুনশাউজেনের নিজের মুখে বলা অভিজ্ঞতা সংকলন করেন রুডলফ এরিখ রাস্প (Rudolf Erich Raspe)।এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় আষাঢ়ে গল্প সারা বিশ্বে এমন জনপ্রিয়তা লাভ করেছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘মুনশাউজেন সিনড্রোম’ নামে তিনটি অধ্যায়ও আছে।  বাংলা  সাহিত্যজগতে শিবরাম চক্রবর্তী, নারায়ণ স্যন্যাল, কিংবা পরশুরামের লেখাতে আষাঢ়ে গল্পের ছোঁয়া আছে । তবে বাংলা সাহিত্যে যাঁর নাম কেবল আষাঢ়ে গল্প লেখার জন্য স্মরনীয় হয়ে আছে তিনি হলেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর “ডমরু চরিত” সর্বকালের সেরা আষাঢ়ে গল্পের সংকলন৷

প্রবাদটির একটি বাক্যে ব্যবহারের উদাহরণ দেওয়া হল- এইসব আষাঢ়ে গল্প  শুনিয়ে কারো কাছ থেকে উপকার পাওয়ার আশা করো না। 
সূত্র : সববাংলায় 

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন