ঢাকা,  সোমবার  ১৭ জুন ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

রেকর্ড-সম্মাননা ছাপিয়ে কুড়িগ্রামের শাওন

প্রকাশিত: ২২:৩০, ২৪ মে ২০২৪

রেকর্ড-সম্মাননা ছাপিয়ে কুড়িগ্রামের শাওন

সংগৃহিত ছবি

জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স শুরু হয়েছে আজ (শুক্রবার)। শুরুর দিনে নজর কেড়েছে কুড়িগ্রামের মো. শাওন। পারিবারিক চাহিদা মেটাতে দিন মজুরের কাজ করতে হয়। এর মধ্যেই অ্যাথলেটিক্স চর্চা করে জাতীয় জুনিয়র কিশোর বিভাগের ১৫০০ মিটারে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জিতেছে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেখ কামাল জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে ১৫০০ মিটার দৌড়ে পাঁচ বছর আগের রেকর্ড ভেঙ্গেছে শাওন। চার মিনিট ১৪.১২ সেকেন্ডে নতুন রেকর্ড গড়েছে কুড়িগ্রামের এই ছেলে। ২০১৮ সালে চার মিনিট ১৯.২০ সেকেন্ডে আগের রেকর্ডটি গড়েছিল নড়াইলের বিজয় মল্লিক।

অন্য অনেক অ্যাথলেটের মতোই দরিদ্র পরিবারের সন্তান শাওন। তার বাবা মোফাসসেল হক একজন কৃষক। অন্যের জমিতে চাষ করে চার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়েই সংসার চালান তিনি। বাবাকে প্রায়ই সহায়তা করেন শাওন, ‘চার ভাইয়ের মধ্যে আমি বড়। তাই বাবাকে সহযোগিতা করতেই হয়। মাঝে-মধ্যেই বাবার সঙ্গে কাজ করি।’

বাবার সঙ্গে মাঝে-মধ্যে কৃষি কাজ ছাড়াও শুক্র ও শনিবার দিনে সাড়ে তিনশ টাকা করে চুক্তিতে এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজও করে শাওন। সেই টাকা দিয়েই নিজের বাড়তি পুষ্টির খাবার ক্রয় করে। পাঁচগাছি দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র শাওন জানায়, ‘মাদ্রাসা বন্ধের দুই দিন শুক্র ও শনিবার রাজমিস্ত্রীর কাজ করি। ওই টাকা দিয়ে অ্যাথলেটিক্স অনুশীলনের পর পুষ্টিকর খাবার কিনে খাই।’ 

আজ রেকর্ড গড়ায় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা পেয়েছে আর্থিক পুরস্কার হিসেবে। এই অর্থ নিজের পুষ্টিকর খাবারেই ব্যয় করতে চায় শাওন। আগে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট খেলত। সেখানে দম হারানোয় ১৫০০ মিটার বেছে নেওয়া তার, ‘এক সময় ফুটবল খেলতাম। কুড়িগ্রামের কোচ শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে অ্যাথলেটিক্সে এসেছি। শুরুর দিকে আমি ১০০ ও ২০০ মিটারে চেষ্টা করেছি। সেখানে তেমন দম পেতাম না। তাই ১৫০০ মিটারে খেলছি। এখানে ভালো খেলছি, এতে তৃপ্ত।’

শেখ কামাল ৩৮তম জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ৪৫ ক্রীড়া সংস্থার ৩৯২ জন অ্যাথলেট অংশগ্রহণ করেছেন। বালক-বালিকা (অ-১৭),কিশোর-কিশোরী (অ-১৯) দুই ভাগে হচ্ছে খেলা। প্রতিযোগিতার আকর্ষণীয় ১০০ মিটারের চার ইভেন্টের স্বর্ণই বিকেএসপির। দুই বিভাগে দ্রুততম মানব (বালক) মো. শিপন মিয়া, দ্রুততম মানবী (বালিকা) মিম আক্তার এবং দ্রুততম মানব (কিশোর) দেলোয়ার হোসেন, দ্রুততম মানবী (কিশোরি) সুমাইয়া আক্তার প্রথম হয়েছেন।

আজ প্রথম দিনে তিনটি রেকর্ড হয়েছে। ১০০মিটার (কিশোরী) ইভেন্টে বিকেএসপির সুমাইয়া আক্তার ১২.৪৯ সেকেন্ড (ই) টাইমিংয়ে একই সংস্থার ২০১৯ সালে সোনিয়া আক্তারের করা রেকর্ড ভাঙেন। তার টাইমিং ছিল ১২.৬৬ সেকেন্ড (ই)। ১৫০০ মিটার (কিশোর) ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার মো. শাওন, সময় নেন ৪:১৪.১২ সেকেন্ড (ই)। আগে এই ইভেন্টে ২০১৮ সালে রেকর্ড ছিল নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিজয় মল্লিকের, সময় নিয়েছিলেন ৪:১৯.২০ সেকেন্ড (ই)। শটপুট (কিশোরী) ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন বিকেএসপির শারমিন আক্তার। তিনি ১২.১০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছেন। পূর্বে এই ইভেন্টে ২০১৬ সালে একই সংস্থার তাহমিনা আক্তার লোপা ১০.৪২ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছিলেন।

জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ২ জন কৃতি অ্যাথলেটকে প্রতিযোগীদের সামনে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে সম্মাননা ও চেক হস্তান্তর করা হয়। ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠেয় ১১তম এশিয়ান ইনডোরে ৪০০মিটার ইভেন্টে রৌপ্য পদকজয়ী মো. জহির রায়হানকে ২ লাখ এবং একই প্রতিযোগিতার হাইজাম্প ইভেন্টে বোঞ্জ পদক অর্জনকারী মো. মাহফুজুর রহমানকে ১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন।